মঙ্গলবার- ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

অস্ত্রসহ ধরা ‘ব্ল্যাক শামীম’ ছাত্রলীগ পরিচয়ে করেন ব্ল্যাক কাজ

print news

তার নাম শামীম আজাদ মুন্না। তবে ‘ব্ল্যাক শামীম’ নামেই পরিচিত সে। পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই। বসবাস করেন নগরের খুলশীতে। করেন ছাত্রলীগের রাজনীতি। ব্ল্যাক শামীম চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পাহাড় কাটা, হুমকিসহ টাকার বিনিময়ে (ভাড়ায় খেটে) করেন বিভিন্ন ব্ল্যাক কর্মকাণ্ড।

এসব অভিযোগে দায়ের হওয়া অন্তত ৫ মামলার আসামি সে। আর তার এসব কাজের গডফাদার চসিকের পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াসিম। তারই নির্দেশে ভোটের দিন পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কেন্দ্রে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি ছুড়ে তাক লাগান ব্ল্যাক শামীম। শেষ মেষ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রসহ তিনি গ্রেপ্তার হন র‍্যাবের হাতে।

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় র‍্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেপ্তার শামীম আজাদ মুন্না মিরসরাই থানার সায়েরখালী গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার শামীম একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিল। শুধু এসব কর্মকাণ্ড নয়, তার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা, হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন অপরাধের তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। এসব অপকর্মের জন্য তার বিরুদ্ধে এর আগে ৫টির অধিক মামলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাকে ইতোপূর্বে তিনবার গ্রেপ্তারও করেছে। তিনবারই তিনি জামিনে এসে তার অপকর্ম চালিয়ে গেছেন।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

তিনি মূলত ৭ জানুয়ারি পাহাড়তলী এলাকায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত করার জন্য তার নেতৃত্বে আরও কিছু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে কেন্দ্রের সামনে আধিপত্য বিস্তার, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা বা সহিংসতা ঘটান। তিনি ভোটকেন্দ্রের সামনে নিজে বিদেশি পিস্তল দিয়ে প্রতিপক্ষকে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন। তার গুলিতেই শান্ত ও জামাল নামে দুজন গুরুতরভাবে আহত হন।

তিনি বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার শামীমের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়। সেই মামলায় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। তিনি ঘটনার পর সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে আত্মগোপনে যান। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তার অবস্থান নিশ্চিত করলে তিনি সেটি বুঝতে পেরে অন্য স্থানে আত্মগোপনের জন্য সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এর আগেই সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।

ভোটের সময় শামীম কার পক্ষে কাজ করেছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ব্ল্যাক শামীমের পরিচয় সে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজ। সে বিভিন্ন সময় অর্থের বিনিময় ভাড়ায় খেটে বিভিন্ন অপকর্ম করেছে। আমরা তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। সে মূলত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে ভোটের দিন প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছে এবং দু`জনকে গুরুতর আহত করেছে। সেখানে ভিকটিম যে মামলা দায়ের করেছেন সেখানে উল্লেখ আছে, শামীম স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অর্থাৎ ফুলকপি মার্কার প্রার্থী ও চসিকের সাবেক মেয়র মঞ্জুর আলম পক্ষে কাজ করেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি এবং তদন্ত করছি।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, শামীমকে আমরা ইতোপূর্বে তিনবার আটক করেছি। তিনবারই তিনি কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে এসেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পরিচয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিলেন। এ ঘটনায় আর কেউ তাকে উস্কে দিয়েছিলেন কিনা বা কেউ জড়িত কিনা সে বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আমরা যদি আর কারও সংশ্লিষ্টতা বা মদতদাতা পাই তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব।

যে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এটি নির্বাচনের দিন ব্যবহার করা অস্ত্র কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটি অবৈধ অস্ত্র। আমরা যে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছি সেটির সাথে নির্বাচনের দিন ব্যবহার করা অস্ত্রের অনেকটা মিল রয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছেন, এটি সেই অস্ত্র নয়। এটা অন্য একটি অস্ত্র। এটি আসামির নিরাপত্তার জন্য তার পাশে রেখেছিলেন। কিন্তু এই অস্ত্র সেই অস্ত্র কিনা, এটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কিছু ফরেনসিক চেক আছে। সেটি করলে আসলে আমরা জানতে পারব ওই অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছিল নাকি অন্য অস্ত্র দিয়ে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যারা নির্বাচনে সহিংসতা করেছে বা পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছে তারা যে হোক তাদের সকলকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হবে।

এর আগে, গত ৭ জানুয়ারি খুলশীর পাহাড়তলী কলেজ এলাকায় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালীন সময়ে সকাল সাড়ে ১০টায় পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ এলাকায় প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে প্রতিপক্ষকে গুলি ছোড়েন শামীম। আর সেই ঘটনায় শান্ত বড়ুয়া (৩০) ও মো. জামাল (৩২) নামে দুজন গুরুতর আহত হন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামীম আজাদ ওরফে ব্ল্যাক শামীম ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। শামীমের মতো আরও একাধিক সন্ত্রাসী রয়েছে কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর ছত্রছায়ায়। যারা রেলওয়ে, চসিক, গর্ণপূর্ত ও এলজিইডি বিভাগে টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন দীর্ঘ সময় ধরে।

ঈশান/মখ/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show