মঙ্গলবার- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

আদেশ অমান্য করে সীতাকুন্ডে শিপ ইয়ার্ডের জন্য বনভুমি ইজারা

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি

আদেশ অমান্য করে সীতাকুন্ডে শিপ ইয়ার্ডের জন্য বনভুমি ইজারা
print news

ট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলে জাহাজভাঙা শিল্পের ইয়ার্ড স্থাপনের জন্য কোহিনূর স্টিলকে উপকুলীয় বনভুমির জায়গায় দেওয়া ইজারা পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত।

রবিবার (২ জুন) দুপুরে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ আদালত বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে আগামী ৯ জুলাই আদালতে হাজির হয়ে ইজারা পুর্নবহালের আদেশের বিষয়টি ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে তাকে।

এর আগে গত ৩০ মে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে আদালত অবমাননার একটি মামলা (২০২/২০২৪) করে। মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে এ রুল জারি করেন আদালত।

আদালত সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ড এলাকায় ভুমিদস্যু ও মাদক পাচারকারী হিসেবে পরিচিত আবুল কাশেম প্রকাশ রাজা কাশেম বিবিসি স্টিলের নামে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে উপজেলার উত্তর সলিমপুর মৌজার ২১ দশমিক ৫৭ একর জমি ইজারার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন।

ওই জমির মধ্যে সমুদ্র উপকূলের অংশ তুলাতলী মৌজা অর্থাৎ নির্ধারিত জাহাজভাঙা শিল্পাঞ্চলের বাইরে ছিল বলে সীতাকুণ্ড ভূমি অফিসের প্রতিবেদন উঠে আসে। ২০১৯ সালে বিবিসি স্টিলকে সীতাকুণ্ডের তুলাতলী মৌজায় ৭ দশমিক ১০ একর জমি দেওয়া হয়। এ সুবাধে রাজা কাসেম উপকুলীয় বনবিভাগের ১৯৪ একর জমি ঘেরা-বেড়া দিয়ে জবর দখল করে। বনবিভাগ এ বিষয়ে আপত্তি জানায়। দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

এরপর ইজারা বাতিলের জন্য উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা করে বেলা। ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত ইজারা প্রক্রিয়াটিকে অননুমোদিত ঘোষণা করেন এবং জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগকে বনভূমি রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

এরপর ঘটে নতুন কাহিনী। রাজা কাশেম তার দ্বিতীয় স্ত্রী কোহিনুরের নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে উপকুলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অনাপত্তি পত্র সংযুক্তির মাধ্যমে আবারও ইজারার জন্য আবেদন করেন। পরে এই কোহিনূর স্টিলের নামেই ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৫ একর জমি ইজারা দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

আর ইজারা দেওয়া জমিগুলোই সংরক্ষিত  উপকুলীয় বনের দখল করা একই জমি। যার উপর একাধিক অফিস ভবনসহ জাহাজভাঙা শিল্পের নানা স্থাপনা স্থাপন করে। এমনকি পাথর ঢালাই করে সাগরের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে। এসব জমি জাহাজভাঙা শিল্প এলাকার না হলেও কাগজে-কলমে মৌজা পরিবর্তন করে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

এ ঘটনায় ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, কোহিনূর স্টিলসহ বিভিন্ন পক্ষকে আইনি নোটিশ দেয় বেলা। একই জায়গা নতুন করে ইজারা দেওয়ায় বেলা আদালত অবমাননার আবেদন জানায়। এরপর উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ২০২৩ সালের জুনে দ্বিতীয় দফায় ইজারা বাতিল করে জেলা প্রশাসন। ইজারা বাতিলের বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়।

তখন জেলা প্রশাসনের নথিতে ইজারা বাতিলের কারণ হিসেবে কোহিনূর স্টিল ইয়ার্ডের জমিকে তুলাতলী মৌজার (শিল্পজোন বহির্ভূত) উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, ইজারাদার গাছপালা কেটে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করেছেন। ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে জমি দখল করে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেছেন।

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই বার ইজারা বাতিল হওয়ার পরও সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলের ৫ একর জমি কোহিনূর স্টিলকে ইজারা ফিরিয়ে দিতে গত ২৪ মার্চ নির্দেশ দিয়েছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (রাজস্ব) আদালত। কিন্তু বিষয়টি কাগজে পত্রেই রয়ে যায়। সবকিছু গোপন রেখে সেই জায়গায় জাহাজভাঙার কাজ শুরু করে ভুমিদস্যু রাজা কাসেম।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আইনজীবী হাসানুল বান্না বলেন ‘১৯৮৩-৮৪ সাল থেকে এই উপকূলীয় জমিতে বনায়ন করা হয়। বন রক্ষায় জমিগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বন ফিরে পাবে তার আপন পরিবেশ।

আদালত স্পষ্টভাবে বলেছেন, এ ধরনের কার্যক্রম চলাকালীন কোনো ইজারা দেওয়া উচিত নয়। জেলা প্রশাসনকে জমি সংরক্ষণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। বন বিভাগের আপত্তি সত্ত্বেও ইজারা মঞ্জুর করায় এ অঞ্চলের বন উজাড় হয়েছে, পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় বেলার পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ফলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত। 

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show
error: Content is protected !!