মঙ্গলবার- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

সিইসির কাছে আবু আহমেদ জুনুর অভিযোগ

আলোচিত ঋণখেলাপি জসিম উদ্দিন বেনজীরের ব্যবসায়ীক পার্টনার!

আলোচিত ঋণখেলাপি জসিম বেনজীরের ব্যবসায়ীক পার্টনার!
print news

‘‘ওনি বেনজীরের লোক, বেনজীর স্যারের সঙ্গে ওনার ব্যবসা। আপনি ওনার সঙ্গে পারবেন না। বড় অংকের টাকা ধরে বসে যান।’— বারবার আমাকে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন খোদ চন্দনাইশ থানার ওসি।’’

ণখেলাপি ব্যবসায়ী’ জসিম উদ্দীন সাম্প্রতিক আলোচিত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের ব্যবসায়ীক পার্টনার ও ঘনিষ্ট সহযোগী! এ সুবাধে আদালতের সাজা পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ‘পুলিশ প্রটোকলে’ চালিয়েছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। ঋণখেলাপিতে দণ্ডিত হওয়ার পরও প্রার্থিতা বাতিল করেননি রিটার্নিং অফিসার। পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনকে ‘বশীভূত’ করে ভোটের মাঠে ‘খাটিয়েছেন’ প্রভাব।

এছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘন, কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলা, এজেন্টদের কাছ থেকে জোর করে সই নেওয়াসহ এমন নানা অভিযোগের ফিরিস্তি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ জুনু।

তিনি এসব কারণে চন্দনাইশে উপজেলা নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল বাতিল করে গেজেট প্রকাশ স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন। গত ১ জুন (শনিবার) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর এ অভিযোগলিপি পাঠান আবু আহমেদ জুনু। সোমবার (৩ জুন) বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।

অভিযোগে তিনি বলেছেন, ‘মোটর সাইকেল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ব্যবসায়ী জসিম উদ্দীন একজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। পুলিশের প্রাক্তন আইজি বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশীদার। গত ৪ এপ্রিল তাকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঘোষণা দিয়ে জসিম উদ্দীনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন অর্থঋণ আদালত। ৩০ এপ্রিল ৫ মাসের আটকাদেশও দেন। তাঁকে বাঁচাতে নিয়মবহির্ভূত আবেদন করায় পদ্মা ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকেও শোকজ করেন আদালত।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

পরে ৩০ এপ্রিল অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করে হলফনামা সংযুক্ত করেন জসিম। যেখানে খেলাপি ঋণের বিষয়টি গোপন করা হয়। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণ উদ্ধারের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে পদ্মা ব্যাংক। ওই মামলায় তাঁর সাজাও হয়েছে। হলফানামার তথ্য গোপনের বিষয়টি উল্লেখ করে আপীল কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগও দেয় পদ্মা ব্যাংক। আপিল না মঞ্জুরের পর ভোটের দুদিন আগে ২৭ মে আবারো পুনরায় আবেদন করা হয়। এছাড়া ১৯ মে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগও দায়ের করে।’

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘ভোটের আগে প্রার্থী জসিম উদ্দিন আহমেদ রাস্তা বন্ধ করে সভা সমাবেশ করায়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হত্যার হুমকি, প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারকার্য চালানো, নগদ অর্থ বিতরণ, ডিজিটাল ব্যানার ও ডাবল মাইক ব্যবহারসহ ৭টি অনিয়মের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার বরাবর অভিযোগ জানানো হয়। এরপরও রিটার্নিং অফিসার কোনো ব্যবস্থা নেননি। সাজামূলে তাঁর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও পুলিশ প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার না করে পুলিশ প্রটেকশনে নির্বাচনী কার্য করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

অথচ এখনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আদালত থেকে রিকল করা হয়নি। এছাড়া ভোটের দিন জসিম উদ্দীন আহমদ পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনকে বশীভূত করে ৯টি ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রুমের ভেতর তালাবদ্ধ করে রাখে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মীদের ব্যালট পেপারে সিল মারার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করলে পুলিশ তাঁর মোবাইল কেড়ে নিয়ে ছবিগুলো ডিলিট করে ছেড়ে দেয়। পরে জসিম উদ্দীনের কর্মীরা তাঁর কর্মী সমর্থকদের মারধর করেন।’

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

এসব অভিযোগে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের পাঠানো বেসরকারি ফলাফল বাতিল করে গেজেট প্রকাশ কার্যক্রম স্থগিতের আর্জি জানান আবু আহমেদ জুনু।

এদিকে পদ্মা ব্যাংক হেড অফিসের একটি চিঠিতে জানা গেছে, ভোটের দুদিন আগে অর্থাৎ ২৭ মে যেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে ‘ঋণখেলাপি’ জসিম উদ্দীনের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন জানিয়েছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পদ্মা ব্যাংকের এসইভিপি ফিরোজ আলম স্বাক্ষরিত ওই পত্রে জানানো হয়েছে, জসিম উদ্দীন চৌধুরী উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সিআইবি রিপোর্টে ঋণখেলাপি না দেখানোর যে ৩ মাসের স্থগিতাদেশ আনেন তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আপিলে ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো সিআইবি বরাবর পত্র পাঠিয়ে অবহিত করা হয়। ওই পত্রে ঋণখেলাপি হওয়ায় জসিম উদ্দীনের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন জানিয়েছিল পদ্মা ব্যাংক।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আবু আহমেদ চৌধুরী জুনু। তিনি বলেন, ‘‘ওনি বেনজীরের লোক, বেনজীর স্যারের সঙ্গে ওনার ব্যবসা। আপনি ওনার সঙ্গে পারবেন না। বড় অংকের টাকা ধরে বসে যান।’— বারবার আমাকে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন খোদ চন্দনাইশ থানার ওসি। আমি ছাত্রজীবন থেকে সংগঠন করে আসা লোক। তাই ওনার এ প্রস্তাবে আমি সায় দিইনি।’’

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

তিনি আরো বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে ভোটের দিন পর্যন্ত আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা সবাই মিলে এমন বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন মনে হয়েছে আমি কেউই না! রাতের আঁধারে আমার সমর্থকদের ঘরে ঘরে গিয়ে ডিবির লোক পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বড় বড় কেন্দ্রগুলো দখলের পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চন্দনাইশ থানার ওসি ওবায়েদুল হক বলেন, ‘ওনি বললেই কি হলো? এ ধরনের কোনো কথা আমি ওনাকে বলিনি।’

এদিকে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে বেসরকারিভাবে বিজয়ী চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয় সোমবার বিকেলে। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

গত ২৯ মে চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জসিম উদ্দিন আহমেদ।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show
error: Content is protected !!