রোবটিক্স প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এবার এক অভাবনীয় উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, ভবিষ্যতে তৈরি হওয়া নতুন রোবট মানুষের মনের কথাও বুঝবে। ত্বক স্পর্শ করেই আবেগ শনাক্ত করতে পারবে।
গবেষণাপত্রটি বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাপত্রের অন্যতম উন্মুক্ত অনলাই প্ল্যাটফরম ‘ইনস্টিটিউট অব ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাক্সেস’ (IEEE Access) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম (চেহারা শনাক্তকরণ পদ্ধতি) এবং স্পিচ অ্যানালাইসিস সিস্টেমের (কথোপকথন শনাক্তকরণ পদ্ধতি) মতো চিরাচরিত আবেগ চিহ্নিতকরণ পদ্ধতিতে অনেক ত্রুটি আছে। সে কারণে, গবেষকরা একজন ব্যক্তির আবেগ বোঝার জন্য ত্বকের সঞ্চালন বা স্কিন কন্ডাক্ট্যান্স (Skin conductance) বৈশিষ্ট্য নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন।
এই পরীক্ষায় ত্বক কতটা ভালো ভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করতে পারে তার পরিমাপ করা হয়। এটি সাধারণত ঘাম নিঃসরণ এবং স্নায়বিক কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয়, যা মানুষের বিভিন্ন মানসিক অবস্থাকে প্রতিফলিত করে। এজন্য বিজ্ঞানীরা ৩৩ জনের ওপর গবেষণা চালান। তাদের আবেগ-উদ্দীপক ভিডিও দেখানো হয় ও সে সময় তাদের ত্বকে বৈদ্যুতিক সঞ্চালন পরিমাপ করা হয়। গবেষণায় বিভিন্ন আবেগের জন্য বিভিন্ন প্যাটার্ন লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে ভয়ের অনুভূতি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে থাকতে দেখা গেছে। একই সময়ে, পারিবারিক বন্ধনের আবেগ, সুখ-দুঃখের মিশ্র অনুভূতির জন্য ধীর প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অন্য দিকে, হাস্যকর ভিডিওগুলি দেখার পর দ্রুত বিবর্ণ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, শিগগিরই শক্তিশালী এমন প্রযুক্তি তৈরি করা সম্ভব হবে যা শারীরবৃত্তীয় সংকেতসহ বিভিন্ন আবেগ-অনুভূতি সঠিকভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হবে। এবং সে প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোবট তৈরি করা হবে যে মানুষের দৈনন্দিন কাজে সহযোগিতা করার পাশাপাশি মানুষের সুখ-দুঃখের অংশীদার হবে। পাশাপাশি মানুষের মানসিক অস্থিরতায় বন্ধুর মতো পাশে থাকবে, মানসিক স্বান্তনা দিবে, সাহস জোগাবে।
তবে এ প্রযুক্তি সফল হলে কিছু সমস্যাও রয়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার কারণে রোবট যদি মানুষের মতো আচরণ করা শুরু করে তবে ভিন্ন ঘটনাও ঘটতে পারে, যা মানুষের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ সম্ভাবনাও তাই একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। কারণ ইতোমধ্যেই এআই এর অতি সক্ষমতা নিয়ে বেশ বিপাকে রয়েছেন প্রযুক্তি বিশারদরা। তাই নতুন কোনো উদ্ভাবন যেন মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায় এমনটাই প্রত্যাশা বিজ্ঞানীদের।