সোমবার- ১৯ মে, ২০২৫

ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন ঘিরে চবিতে উচ্ছ্বাস!

ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন ঘিরে চবিতে উচ্ছ্বাস!

শিক্ষাজীবন শেষে গায়ে কালো গাউন, মাথায় টুপি আর অর্জিত ডিগ্রির সনদ হাতে পাওয়ার স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রতিটি শিক্ষার্থীর। যা মিলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।

দীর্ঘ ৯ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৪ মে। যেটা হবে ৫ম সমাবর্তন। তাছাড়া ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর এই সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হয়ে আসছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস।

ফলে এই সমাবর্তন ঘিরে অন্যরকম উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মাঝে। আর এটিই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। তাই এ আয়োজনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নিয়েছে নানান পরিকল্পনা।

মঙ্গলবার (২২ এপৃল) দুপুরে এ তথ্য জানান সমাবর্তন উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী। তিনি বলেন, নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ৯ বছর পর হতে যাচ্ছে চবির এই সমাবর্তন। যেখানে অংশ নিবে ২২ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী। যা এর আগে এত শিক্ষার্থী কোন সমাবর্তনে অংশ নেয়নি। তাই বলা হচ্ছে এটিই হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন।

তিনি বলেন, সমাবর্তন ঘিরে আমরা নানা কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমরাই সর্বপ্রথম অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারকে ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করতে যাচ্ছি। অনেক আগেই এটা উনি ডিজার্ভ করলেও আমরা তাকে দিতে পারিনি নানা বাস্তবতায়, এটা আমাদের জন্য ব্যর্থতা।

এছাড়া সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উপাচার্যের হাতে স্বাক্ষর করা সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জানা যায় মোট ১৬ হাজার ৬১৫ জনের বিভিন্ন ডিগ্রীর সনদে নিজ হাতেই স্বাক্ষর করছেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। যেখানে আমরা সর্বশেষ যারা পাশ করেছে তাদেরকেও সমাবর্তনের আওতায় এনেছি।

এছাড়া বিপ্লবকে মাথায় রেখে সমাবর্তনের লোগো করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চবির ৫ম সমাবর্তনের লোগোর দুইপাশে সবুজ ঘেরা দিয়ে বুঝানো হয়েছে চবিকে ঘিরে রাখা সবুজ প্রকৃতি, লোগোর নিচে শহীদ আবু সাইদের সেই আগুনঝরা প্রতিকৃতি দুইহাত সম্প্রসারিত করে দেওয়া হয়েছে, আর লাল রঙ দেওয়া হয়েছে বিপ্লবকে সমর্থন করার জন্য।

উন্মোচিত এ লোগো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য, গৌরবময় ইতিহাস ও শিক্ষার আলোকে আগামীর পথচলার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সমাবর্তনের এ লোগো আগামী দিনের সব আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম, স্মারক ও প্রচারণায় ব্যবহৃত হবে বলেও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

চবির ৫ম সমাবর্তন বাস্তবায়নে ১৯টি উপ-কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সনদ উপ-কমিটি, র‌্যালি ও অভ্যুর্থনা উপ-কমিটি, আপ্যায়ন উপ-কমিটি, স্যুভেনির উপ-কমিটি, প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি।

সদস্য-সচিব ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, সমাবর্তন ঘিরে আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের উচ্ছ্বাস ও আবেগ দেখা যাচ্ছে। সবাই আনন্দ নিয়ে কাজ করছে। আমরা অধীর অপেক্ষায় আছি সমাবর্তন নিয়ে। সম্ভবত এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন হতে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে প্রশাসন নিয়মিতভাবে সমাবর্তন আয়োজন করবে। তাহলে শিক্ষার্থীদের যে একটি আশা সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এই সমাবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের সমাবর্তনের যে জট সেটাও নিরসনের পথ উন্মোচন হবে। আগামীতে নিয়মিত সমাবর্তন করতে পারবো।

চবির তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছরে হতে যাচ্ছে এই ৫ম সমাবর্তন। যেখানে অংশ নিতে ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী। দেশের ইতিহাসে এরচেয়ে বড় সমাবর্তনের নজির নেই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিতির পাশাপাশি ড. ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রী গ্রহন করবেন।

রীতি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আচার্য। তবে এবছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে আসবেন না রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দীন চুপ্পু। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী চ্যান্সেলরের অনুপস্থিতিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার সমাবর্তনের সভাপতিত্ব করবেন।

চবির উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি জ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় অনন্য অবদান রাখলেও যথা সময়ে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের সমাবর্তন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সবশেষ অনুষ্ঠিত ৪র্থ সমাবর্তনও হয়েছিল এর আগে এই বিশ্বদ্যিালয়ে ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি। যেখানে সভাপতিত্ব করেছেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আব্দুল হামিদ।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। ঐ সমাবর্তনে অংশ নিয়েছিল ৭ হাজার ১৯৪ জন গ্র্যাজুয়েট। এছাড়া ২৫জন পিএইচডি ও ১৩জন গবেষককে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়।

এর আগে চবিতে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র ৩টি। সর্বপ্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে। দ্বিতীয় সমাবর্তনটি হয় ১৯৯৯ সালে। ৩য় সমাবর্তনটি হয় ২০০৮ সালের নভেম্বরে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page