Skip to content

শনিবার- ২৪ মে, ২০২৫

উপকরণ সঙ্কটে ধুকছে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম

উপকরণ সঙ্কটে ধুকছে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম

পকরণ সঙ্কটে ধুকছে চট্টগ্রাম বিভাগের বন্যাকবলিত ৭ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। সাম্প্রতিক বন্যায় এই ৭ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও আসবাবপত্র। যার শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার। নষ্ট হয়েছে এসব শিক্ষার্থীদের বই, খাতা ও স্কুল ড্রেস।

এক মাসেরও বেশি সময় পার হলেও এখনো স্কুলগুলোকে পুরোপুরি পাঠদানের উপযোগী করা সম্ভব হয়নি। ফলে আসন্ন বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণেও বড় ধরণের সংকট তৈরী হয়েছে। এমনটাই মনে করছেন প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মতে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই, খাতা ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ না থাকার কারণে পড়াশোনা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বন্যার পানি জমে থাকায় অনেক এলাকায় এখনো স্কুলের সংস্কার করা যাচ্ছে না। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে দেরি হচ্ছে। স্কুলে পড়াশোনার পরিবেশ ফেরাতে হলে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি স্কুলগুলোকে দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোয় পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে বন্যার সময় স্কুলগুলোয় থাকা বিভিন্ন উপকরণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম শতভাগ শুরু করা যায়নি। স্কুলগুলোয় গিয়ে শিক্ষাকদের শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করতে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ড্রেস, স্কুলব্যাগ, বইসহ অন্যান্য উপকরণের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের চাহিদাপত্র দিতে বলা হয়েছে। চাহিদাপত্র ছাড়া শিক্ষার্থীদের বেশকিছু শিক্ষা উপকরণ সরকারি ও বেসরকারিভাবে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেহেতু বন্যার কারণে শিক্ষার্থীদের বই-খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ নষ্ট হয়ে গেছে, সেজন্য তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বিকল্প উপায়ে নিয়মিত করতে সহায়তা দরকার।

বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষার জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত হাতে সময় রয়েছে। মনে হচ্ছে, বার্ষিক পরীক্ষা নিতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে বিষয়টি সহজ হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বন্যায় চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিপুলসংখ্যক স্কুল কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলো।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ হাজার ৫৭৬টি স্কুলের মধ্যে ৩ হাজার ৪৯টি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ২৩৩টি স্কুল। এসব স্কুলের ২ লাখ ৬৯ হাজার ১২ শিক্ষার্থী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ১ লাখ ২০ হাজার ৭৭২ ও মেয়ে শিক্ষার্থী ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৪০ জন।

সূত্র আরও জানায়, বন্যাকবলিত এলাকায় ২ লাখ ৬৬ হাজার ২৮০টি স্কুল ব্যাগ, ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৭ সেট স্কুল ড্রেস সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া কী পরিমাণ বইয়ের চাহিদা জরুরি ভিত্তিতে রয়েছে সে বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা কাজ করছেন। কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে। তবে চাহিদাপত্র অনুযায়ী বই পর্যাপ্ত থাকায় শিক্ষার্থীদের বই নিয়ে কোনো সংকট হবে না বলে শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ আশাবাদী।

সূত্র জানায়, বন্যার কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের সাত জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো, ইলেকট্রিক ডিভাইসসহ বিভিন্ন খাতে ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮০০ টাকা। তবে প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য যুক্ত হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ সময়সাপেক্ষ বলে জানা যায়।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের মতে, বন্যার কারণে স্কুলগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় বইসহ অন্যান্য উপকরণেরও ক্ষতি হয়েছে। স্কুলগুলোয় পলি জমে থাকায় ক্লাস শুরু করাই এখন চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া স্কুলের অবকাঠামো, আসবাবপত্র ঠিকঠাক করে স¤পূর্ণভাবে চালু করতেও কিছু সময় লাগবে।

শিক্ষকদের ভাষ্য, এখন প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবর্ষ শেষ করা। শিক্ষার্থীদের খাতায় হাতে লিখে, ফটোকপি করে বা অন্যভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। স্কুলগুলোয় এখনো শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে না পারলে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ভেস্তে যাবে।

ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বন্যায় এখানকার স্কুলগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, ব্যাগ, স্কুল ড্রেসসহ অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষকদের নানা সংকট থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যতদিন না শিক্ষা উপকরণ হাতে হাতে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে, ততদিন হাতে লিখে বা বই শেয়ারিং বা অন্যান্য উপায়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবর্ষ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

আশার কথা হচ্ছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জাতিসংঘের শিশু কল্যাণ বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওসব শিক্ষা উপকরণের মধ্যে খাতা, কলম, পেনসিল, স্কুলব্যাগ বা ড্রেসসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ রয়েছে। বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ইউনিসেফের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঈশান/খম/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page