মঙ্গলবার- ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

কর্মকর্তা-কর্মচারি সংকটে কাহিল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল

কর্মকর্তা-কর্মচারি সংকটে কাহিল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল
print news

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটা পদ উপপরিচালক (পিআর)। এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন মো. ফেরদৌস নামের এক কর্মকর্তা। পেশাগত কারণে তথ্যানুসন্ধানসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে পূর্বাঞ্চলে গেলে খুব কম সময়ই দেখা মেলে তার। কারণ তিনি একই সময়ে দায়িত্ব পালন করছেন পরিবহন শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক হিসেবেও।

পরিবহন শাখা যেহেতু অধিক গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু বেশির ভাগ সময় সেখানেই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পূর্বাঞ্চল সদর দপ্তর থেকে পরিবহন শাখার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। পেশাগত দায়বদ্ধতায় সেখান থেকে এসে দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে। যে কারণে কর্মদিবসের বেশির ভাগ সময় খালি থাকে পূর্বাঞ্চলের উপপরিচালক-জনসংযোগের চেয়ার।

শুধু পিআর-ই নয়, পিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এমন ৭৩ কর্মকর্তার পদ খালি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তরে। পূর্বাঞ্চলে ২২ হাজার ৩৫৮টি মঞ্জুরীকৃত জনবলের বিপরীতে ১১ হাজার ৫২২ জনবল নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পূর্বাঞ্চলের ট্রেন, যা মোট জনবলের অর্ধেক। সেই সাথে সংকটের সুযোগ নিয়ে এক কর্মকর্তা একাধিক দপ্তর থেকে নানা অনিয়ম ও কারসাজি করে সরকারি অর্থ হরিলুটের অভিযোগও উঠেছে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

অভিযোগ উঠেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল দপ্তরের প্রকৌশলী (সেতু) জিশান দত্ত সেতু বিভাগের কর্ম সম্পাদনের পাশাপাশি নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। সেতু বিভাগের কাজে ফাইল স্বাক্ষরে তার বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের কমিশন আদায়ের অভিযোগ অনেক আগে থেকেই। সেই সাথে এখন লুটেপুটে খাচ্ছে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব সম্পাদনেও।

শুধু কর্মকর্তা নয়, কর্মচারি সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ট্রেন চালানোর জন্য যে পরিমাণ লোকমোটিভ মাস্টার (চালক) দরকার, সে পরিমাণ নেই। ফলে বাড়তি ডিউটি করতে হচ্ছে চালকদের। মাত্রাতিরিক্ত ডিউটি করার কারণে তাদের মধ্যে একধরনের মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়, যা ট্রেন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত ডেউটির বিষয়টি স্বীকার করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লোকমোটিভ মাস্টার। তিনি বলেন, এমনও সময় যায়, ঘর থেকে বের হওয়ার পর তিন-চার দিন আর ঘরে ফেরা হয় না।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মোট জনবলের মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ ও কর্মরত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মঞ্জুরীকৃত মোট পদ রয়েছে ২২ হাজার ৩৫৮টি। এই পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১১ হাজার ৫২২ জন। ১০ হাজার ৮৩৬টি পদ শূন্য। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মঞ্জুরীকৃত প্রথম শ্রেণির ২৮৫টি পদের বিপরীতে বর্তমানে লোকবল আছেন ১১২ জন। ১ম থেকে ৯ম গ্রেড পর্যন্ত প্রথম শ্রেণিতে শূন্য পদের সংখ্যা ১৭৩।

মঞ্জুরীকৃত দ্বিতীয় শ্রেণির ১ হাজার ৪২৪টি পদের বিপরীতে বর্তমানে লোকবল ৪১৩ জন। ১০ থেকে ১২তম গ্রেড পর্যন্ত দ্বিতীয় শ্রেণিতে শূন্য পদের সংখ্যা ১ হাজার ১১। তৃতীয় শ্রেণিতে মঞ্জুরীকৃত ৭ হাজার ৪৯৯টি পদের বিপরীতে বর্তমানে লোকবল আছেন ৩ হাজার ৪৬৮ জন। ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেড পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণিতে শূন্য পদের সংখ্যা ৪ হাজার ৩১। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি লোকবলের সংকটে ভুগছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। এই পদে মঞ্জুরীকৃত ১৩ হাজার ১৫০টি পদের বিপরীতে বর্তমানে লোকবল আছেন ৭ হাজার ৫২৯ জন। ১৭ থেকে ২০তম গ্রেড শূন্য পদের সংখ্যা ৫ হাজার ৬২১।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে জনবল সংকটের বিষয়ে জানতে কথা হয় জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. নাজমুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তা ও কর্মচারি সংকটের কারণে একজনকে দিয়ে দুই-তিন দপ্তরের কাজ করানো হচ্ছে। যে কারণে দাপ্তরিক অনেক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে সেবার ক্ষেত্রে ভোগান্তি বাড়ছে। জনবল সংকটের বিষয়টি প্রতি মাসেই আমরা সদর দপ্তরে প্রতিবেদন আকারে পেশ করি। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরীতে নতুন নিয়োগ জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ঈশান/খম/বেবি

আরও পড়ুন

No more posts to show