
পণ্য পরিবহনে কর্মবরিতির হুমকি দিয়ে ১১ দফা অযৌক্তিক দাবি পূরণে সরকারকে ১৪ দিনের আলিনটমেটাম দিলেন চট্টগ্রাম প্রাইমমুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি মো. আবু ছালেহ জুয়েল।
তিনি বলেন, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমাদের ১১ দফা দাবি পূরণের জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। দাবি পূরণ না হলে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতিতে নামবেন তারা। অচল করে দিবেন সারাদেশের পণ্য পরিবহণ। যা অযৌক্তিক বলে দাবি করছেন বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।
দাবিগুলোতে বলা হয়, ১. উচ্চবিলাসী ও গণবিরোধী সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাতিল করতে হবে নতুবা মাত্রাতিরিক্ত জরিমানা বিধান রাখায় দুর্নীতির সুযোগ থাকার প্রেক্ষিতে সাংঘর্ষিক ধারা ও উপধারাগুলো সংশোধন করতে হবে।
২. প্রাইম মুভার ট্রেইলার ও ফ্লাটবেড গাড়ির ওজন ও মাইলের ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারণ করে সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৩। পূর্বের রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রাইম মুভার ট্রেইলার বিআরটিএ কর্তৃক একই রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে এবং কন্টেইনারবাহী ২০ ফুট গাড়ির ফ্লাটবেড নামকরণ উল্লেখ করতে হবে।
৪। অতিরিক্ত চাকা সংযোজন, লো-বেড, সেমি লো-বেড ও কন্টেইনারবাহী ২০ ফুট গাড়ির ধরণ পরিবর্তনের নামে মামলা ও পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৫। ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিটসহ বিভিন্ন করের উপর আরোপিত ভ্যাট ও অন্যান্য ফি প্রত্যাহার করে একক ডকুমেন্টের আওতায় আনতে হবে।
৬। ভাড়ায় চালিত গাড়ির অগ্রিম আয়কর সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনতে হবে এবং ট্যাক্স টোকেন ফি অর্ধেক করতে হবে।
৭। বিআরটিএ কর্তৃক চালকদের একবারেই পেশাধারী ভারী লাইসেন্স দিতে হবে।
৮। দেশের বিভিন্ন স্কেল লোড একই নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত করা ও ব্রিজে লোড কন্ট্রোল নীতিমালার নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
৯। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় প্রাইম মুভার ট্রেইলার টার্মিনাল দিতে হবে এবং বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য বোঝাইকৃত গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে অন্যান্য সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে।
১০। বাংলাদেশ শ্রম আইনের সাথে সড়ক পরিবহন আইনের সাংঘর্ষিক ধারা-উপধারাসমূহ বাতিল করে সংস্কার করতে হবে।
১১। সমগ্র বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কে চলাচলরত সকল পণ্য পরিবহন হতে মালামাল চুরি, ডাকাতি এবং ড্রাইভার/হেলপারদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
চট্টগ্রাম প্রাইমমুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, দেশের ৮৫ শতাংশ পণ্য সড়ক ও মহাসড়ক দিয়ে পরিবহণ করা হয়। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন বন্দরের ৯৫ ভাগ কার্যক্রম আমাদের এই প্রাইম মুভার ট্রেইলার, ফ্লাটবেড, লো-বেড ও সেমি লো-বেড গাড়ির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যেও ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিয়ে দেশ, জনগণ ও সরকারের পাশে দাঁড়াতে আমরা এক মুহূর্তে পিছপা হইনি। কিন্তু আমরা বরাবরের মতোই সরকারের কাছ থেকে বঞ্চনা, অবহেলা, অন্যায়-অবিচারের শিকার।
কিন্তু দাবিগুলো পর্যালোচনা করে বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, প্রাইমমুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নামে পরিবহণ সেক্টরে চরম অরাজকতায় লিপ্ত কতিপয় লোকজন। তারা প্রাইমমুভার চালক ও সহযোগীদের জিম্মি করে মূলত চাঁদাবাজিসহ নানাভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কাজে লিপ্ত।
প্রাইমমুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কতিপয় নেতা বিগত সময়ে নানাভাবে অর্থ হাতিয়ে বাড়ি-গাড়িসহ এখন অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে গেছেন। এই পেশা ছাড়া তাদের আর কোন পেশা নেই। তাই লোভ সামলাতে না পেরে অন্তবর্তী সরকারের সময়েও তারা কর্মবিরতির নামে পণ্য পরিবহণ বন্ধ করে দিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণকে জিম্মি করে নানা অযৌক্তিক দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। দুদকের উচিত এসব নেতাদের সম্পদের খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।