মঙ্গলবার- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

কাঁদছেন পলাশ কান্তি, টাকা উড়াচ্ছেন আবদুল মান্নান

কাঁদছেন পলাশ কান্তি, টাকা উড়াচ্ছেন আবদুল মান্নান
print news

ক্যান্সারকে জয় করে ব্যাংকার আবুল বশর হাসলেও অঝোরে কাঁদছেন ক্যান্সার আক্রান্ত পলাশ কান্তি দাশ। তার বাড়ি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায়।

গত এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। পলাশ কান্তি দাশ জানান, প্রতিদিন চিকিৎসায় তার ৩-৪ হাজার টাকার ওষুধ লাগছে। যা কেনা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। টাকার অভাবে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে হয়তো তাকে মরতে হবে।

তিনি বলেন, আমার দুটি ছেলে আছে। এদের জন্য আমাকে বাঁচতে হবে। কারণ এরা এখনো ছোট। আমি মারা গেলে আমার স্ত্রী-সন্তানদের দেখার কেউ নেই। আমার একজন ছোট ভাই ছিল, সেও কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আমার মা-বাবাও কেউ বেচে নেই। আমার সন্তানদের মানুষ করার মতো কেউ থাকবে না, যদি আমি মারা যাই। এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার গল্প জানাতে গিয়ে পলাশ কান্তি দাশ বলেন, মাত্র ৬ মাস আগে আমি সাংসারিক কাজে একটি বাঁেশর সাথে বুকে আঘাত প্রাপ্ত হয়। এতে বুকে ব্যাথা শুরু হলে আমি চমেক হাসপাতালে যাই। সেখানে পরীক্ষার পর বুকের ভেতর টিউমার ধরা পড়ে। পরে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান টিউমার ক্যান্সারের কথা। যা শুনে আমি মৃত্যুপুরীতে চলে গিয়েছিলাম।

আর চমেক হাসপাতালে অপারেশন ও চিকিৎসা খরচের কথা শুনে পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয় আমার। শেষ পর্যন্ত আত্নীয়-স্বজনের পরামর্শে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। প্রতিদিন আমাকে যে পরিমাণ ওষুধ খেতে হয় তার অর্ধেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেন। বাকি ৩-৪ হাজার টাকার ওষুধ খরচ যায় আমার। যা যোগান দেওয়া আমার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আত্নীয়-স্বজনের সহযোগীতায় খরচ কোনোমতে চালিয়ে যাচ্ছি বেচে থাকার আশায়।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

ব্যাথা কমাতে টাকা উড়াচ্ছেন আবদুল মান্নান :
দুই মাস আগে হঠাৎ গলায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বখতপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আবদুল মান্নান। শুরুতে স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিলেও পরে বিশেষায়িত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি। তবে নানা পরীক্ষা চলতে থাকে রোগ নির্ণয়ে। পরে জানা যায়, ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনি।

মান্নানের এক স্বজন বলেন, এখন যে অবস্থায় ধরা পড়েছে, এটা একেবারে শেষ পর্যায়ে। ফলে বেচে থাকার আশা একরকম ছেড়ে দিয়েছেন আবদুল মান্নান ও পরিবারের স্বজনরা। যারা বুক ভরা ব্যাথা চাপা দিয়ে আবদুল মান্নানের গলা ও পেটের ব্যাথা কমাতে ব্যয় করছেন লাখ লাখ টাকা। গেছেন ভারতেও। ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় বর্তমানে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আসেন তিনি। সব মিলিয়ে মান্নানের চিকিৎসায় প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন বলে জানান স্বজনরা।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগে চিকিৎসাধীন মহরম আলী জানান, তার ক্যান্সার ধরা পড়েছে গলায়। তিনি প্রতিদিন এক প্যাকেট আকিজ বিড়ি খেতেন। সাথে পান-জর্দা খাওয়ার অভ্যাসও ছিল। একই বিভাগে ভর্তি রণজিত কুমারও প্রচুর ধুমপান করতেন। অ্যালকোহলও খেতেন। ২-৩ মাস আগে তার বমি হতো। পেটেও ব্যথা লাগতো। পরে জানলেন, তার ক্যান্সার।

দুই বছর আগে চতুর্থ বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে গর্ভফুল ছিড়ে গিয়েছিল শারমীন আক্তারের। বাড়িতে সারাদিন রেখে তাকে রাতে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও এরপর থেকে তার তলপেটে ও প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা অনুভব হতো। প্রথমে ডাক্তার দেখিয়েছেন গ্রামে। পরে ব্যথা তীব্র হয়ে উঠলে চমেক হাসপাতালে এসে বর্হিবিভাগে দেখান। সেখানেই ধরা পড়ে তার জরায়ুতে ক্যান্সার। এরপর বিভিষিকাময় জীবন শুরু হয় বলে জানান শারমীন আক্তার।

ঈশান/মখ/মসু

আরও পড়ুন

No more posts to show
error: Content is protected !!