দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় চট্টগ্রাম-১০ আসনের পাহাড়তলী কলেজ কেন্দ্রের সামনে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে গুলির ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।
ওই মামলায় পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করা সেই ব্ল্যাক শামীম ও তার রাজনৈতিক গুরু চসিকের পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, তার স্ত্রী রুমানা চৌধুরী, এমইএস কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কায়সারসহ ৬ জন অনুসারীকে আসামি করা হয়েছে।মামলায় অজ্ঞাত ৪০-৫০ জন আসামি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ রিকশাচালক জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে সোমবার (৮ জানুয়ারী) দুপুরে নগরীর খুলশী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলশী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ দুজনের মধ্যে একজনের স্ত্রী বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলার আসামি ব্ল্যাক শামীমকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে সোমবার রাতে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান পরিদর্শক (তদন্ত) মুজিবুর রহমান।
মামলার এজাহারের বিবরণমতে, বাদী মমতাজ বেগম নিজেকে চট্টগ্রাম-১০ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলমের সমর্থক বলে উল্লেখ করেন। মামলার অভিযোগে তিনি জানান, ভোটের দিন পাহাড়তলি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র থেকে মনজুর আলমের সমর্থকদের চলে যেতে বলে মহিউদ্দিন বাচ্চুর অনুসারীরা। এ সময় বাচ্চুর অনুসারীরা গুলি ছুঁড়লে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। এরপর অন্য আসামিরা তাকে মারধর করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী তারিকুল ইসলাম বলেন, ভোটের দিন মারামারি ও গোলাগুলির ঘটনায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে একই ঘটনায় আরেক গুলিবিদ্ধ রিকশাচালক জামালের স্ত্রী বাদী হয়ে নগরের খুলশী থানায় আরেকটি মামলা করেন। সেই মামলায় পাহাড়তলি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী রুমানা চৌধুরীকে আসামি করা হয়। মামলাটিতে ভোটের দিন প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখা যাওয়া শামীম আজাদকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এদিকে এ ঘটনায় আসনটির সংসদ সদস্য (এমপি) মহিউদ্দিন বাচ্চুর স্ত্রী জিনাত মহিউদ্দিনসহ ছয়জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের চতুর্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সালাউদ্দিনের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন শান্ত বড়ুয়া ওরফে পুনাম বড়ুয়া নামের এক ব্যক্তি।
মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, পাহাড়তলি ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ ও তার স্ত্রী মোসাম্মৎ কাজল, মাহমুদুর রহমান, মো. কামাল ও রাবেয়া মুন্নী মেরি। তারা সবাই এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এর আগে রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম-১০ আসনে পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজের বাইরে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলকপি প্রতীকের মোহাম্মদ মনজুর আলমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কেন্দ্রের দখল নেয়াকে কেন্দ্র করে ঘটা এ সংঘর্ষে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের দিকে গুলি ছুড়েন শামীম আজাদ নামের এক যুবক।
পাহাড়তলী কলেজের বাইরের ওই সংঘর্ষে শান্ত বড়ুয়া ও মো. জামাল নামের দুজন গুলিবিদ্ধ হন। শামীমের গুলি করার একটি ছবি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, শামীম আজাদ স্থানীয় কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা। এলাকায় ব্ল্যাক শামীম নামে পরিচিত এ ছাত্রলীগ নেতার নামে নগর ও জেলার বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে।
ঈশান/খম/সুপ