বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ তিন বছর আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় ইউনাইটেড পিপল’স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা প্রকাশ তালুকদার ওরফে প্রকাশ চাকমা (৩২)। এরপর থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি তিনি। আর কারাগারে থেকেই মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছেন প্রকাশ। করছেন পরিবারকে সহায়তা!
অর্থ আয়ের একমাত্র রাস্তা হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন কারাগারের অন্য হাজতি ও তাদের পরিবারের সঙ্গে নানা প্রতারণা। একাজে কারাগারের বাইরে থেকে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন জয় চাকমা। আইনজীবী পরিচয়ে তিনি হাজতিদের পরিবার থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
এমন একটি অভিযোগ পেয়েছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. এমরান হোসেন মিয়া। রবিবার (১৬ জুলাই) অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। তিনি বলেন, কারাগারে প্রকাশ তালুকদার ও ওরফে প্রকাশ চাকমা নামে একজন বন্দি রয়েছেন। গত ৯ জুলাই রবিবার ডাকযোগে একস হাজতি জয় চাকমা ও প্রকাশের নামে প্রতারণার অভিযোগ এনে একটি চিঠি প্রেরণ করে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগে ভুক্তভোগী হাজতি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম মহানগরের একটি থানার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পদ্মা-১৩ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা অবস্থায় হাজতি প্রকাশ তালুদার ওরফে প্রকাশ চাকমা ওয়ার্ডে আসেন। এরপর কী মামলা জানতে চান তিনি। অস্ত্র মামলা বলার পর প্রকাশ বলেন, ‘তোমার মামলায় আমি জামিন করিয়ে দিবো, তোমার পরিবারের নম্বর দাও। জেলখানার বাইরে আমার এক ভাই আছে যার নাম জয় চাকমা। সে তোমার পরিবারের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা নেবে।’
এসময় প্রকাশ আরও বলেন, দেখো আমি জেলখানা থেকে অনেক আসামি বের করেছি এবং আরও অনেক আসামি আমার হাতে আছে। আমি প্রতিদিন জেলখানার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে হাজতিদের মামলা সম্পর্কে জেনে জয় চাকমাকে দিয়ে কন্ট্রাক্ট করে থাকি। বিনিময়ে জয় চাকমা আমাকে এবং আমার পরিবারকে প্রতি মামলা হিসাবে টাকা দেয়।
এরপর প্রকাশ প্রতারণার মাধ্যমে ভুক্তভোগী হাজতির স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জয় চাকমার মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু ৬ মাস পার হলেও জামিন করাতে পারেননি তিনি। পরে টাকা ফেরত চাইলে প্রকাশ বলেন, ‘জয় চাকমা বলেছে টাকা খরচ হয়ে গেছে ফেরত দেওয়া যাবে না।’ পরে ভুক্তভোগীর স্ত্রী অন্য এক আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন করান।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রতিটি ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে হাজতিদের পরিবারের ফোন নম্বর নিয়ে জয় চাকমার মাধ্যমে হাজতি ও তাদের পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন প্রকাশ চাকমা। এছাড়া কারাগারে এমন আরও একাধিক ভুক্তভোগী রয়েছে বলেও জানানো হয়। কারাগারে আত্মীয় পরিচয়ে টিকিট কেটে ভুক্তভোগী হাজতিদের সঙ্গে দেখা করান জয় চাকমা। এতে কারাবিধি অনুযায়ী প্রতি ১৫ দিন পর দেখা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজতিদের পরিবার-পরিজনেরা। ফলে জয়-প্রকাশের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে এসব পরিবার। এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার অনুরোধও করেন ভুক্তভোগী হাজতি।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ৯ জুন নগরীর বায়েজিদ থানার অক্সিজেন বালুছড়া এলাকার চেকপোস্টে তল্লাশির সময় চারটি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গুলিসহ দুজনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে একজন রাঙামাটি জেলার বাগাইছড়ির আনন্দ তালুকদারের ছেলে প্রকাশ তালুকদার ওরফে প্রকাশ চাকমা। অন্যজন একই জেলার বালাইছড়ির বুদ্ধিধন চাকমার ছেলে প্রিয় চাকমা (৩০)। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র রাজৗনতিক সংগঠন ইউপিডিএফের সক্রিয় কর্মী। পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান করে তারা নানা রকম ছিনতাই-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, নারী ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের মতো নানা অপরাধ কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে।
প্রকাশ তালুকদার ওরফে প্রকাশ চাকমা কারাগারে থাকায় এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে জয় চাকমার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।