
জরাজীর্ণতা সারিয়ে কালুরঘাট রেলসেতুতে যানচলাচল শুরু হয়েছে সবেমাত্র। দীর্ঘ ১৪ মাস সংস্কার কাজ শেষে রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকে যান চলাচল শুরু হয় এ সেতু দিয়ে। এতে ফেরীতে কর্ণফুলী নদী পারাপারের দুর্ভোগের অবসান হলেও নতুন বিপত্তি বেধেছে সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। কারণ সেতুর দু‘প্রান্তে গাড়ি সামলানোর কেউ নেই।
একমুখী সেতুতে দু‘প্রান্ত থেকে ইচ্ছেমতো গাড়ি উঠে সেতুর ওপরে হযবরল অবস্থা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এতে ক্রমেই বাড়ছে দুর্ভোগ। এই অবস্থায় হঠাৎ ট্রেন এসে গেলে ঘটতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা। এমন আশঙ্কা পথচারি ও যানবাহন চালকদের।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকালে সেতু পারাপারকারী শ্যামল বিশ্বাস বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে যান চলাচলের উপযোগী করে সেতুটি খুলে দেওয়ায় দু:খ কিছুটা লাঘব হয়েছে। কিন্তু সেতুতে যেভাবে যানবাহন চলাচল করছে তাতে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। দূর্ঘটনা থেকে বাচতে নতুন রেল কাম সড়ক সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুততম সময়ে করার কোন বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সেতুটি সংস্কারের আগে টোল আদায়কারী ইজারাদার কর্তৃপক্ষ সেতুতে গাড়ি ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতো। সংস্কারের পর টোল আদায়ে কোনো ইজারাদার নিয়োগ হয়নি, ফলে টোলমুক্ত সেতু হলেও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কোন শৃঙ্খলা নেই।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) যানচলাচল শুরুর দ্বিতীয় দিনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুই প্রান্ত দিয়েই যানবাহন চলাচল করছে। মোটরসাইকেল সিএনজি অটোরিকশা, টমটম চেপেচুপে সেতু পার হয় যাচ্ছে। পিছু হটতে হচ্ছে পিকআপ, মিনি ট্রাকের মতো আকারে বড়ো যানবাহনকে। সেতুর দু‘প্রান্ত দিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যানবাহন উঠানামা করায় সেতুর ওপরে এবং দু‘প্রান্তে নামার সময়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
চালকরা বলছেন, সেতুর এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চোখ পাকিয়ে গাড়ি ওঠানামা করছে। কোনো ট্রাফিক সিস্টেম নেই। যার কারণে দেদারসে গাড়ি উঠে সেতুর ওপরে গিয়ে আটকে যাচ্ছে।
পিকআপ চালক নুরুল আলম বলেন, পশ্চিম প্রান্ত থেকে কোন গাড়ি আসতে না দেখায় গাড়ি তুলেছি। কিন্তু মাঝ পথে এসে দেখি সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, টমটমের বহর।
মোটরসাইকেল চালক তোফিকুল ইসলাম বলেন, কোন সিস্টেম নাই। যার যেদিকে মন চাচ্ছে সেদিকে গাড়ি তুলে দিচ্ছে। কে পিছনে যাবে এসব নিয়ে বাকবিতন্ডা চলছে। সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল মানুষ দাঁড়ানোর স্থানে সাইড দিলেও পিকআপ, টমটম নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক এবিএম কামরুজ্জামান বলেন, আগে টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হতো। ওয়ার্কিং রুলে চেঞ্জ হবে না। তবে টেন্ডার হতে দুই আড়াই মাস সময় প্রয়োজন। কিন্তু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ জন্য আমাদের লোকবল সংকট আছে। আমরা চেষ্টা করছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে গেইট ম্যান বাড়ানোর।
টোল আদায়ে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে শুরু হচ্ছে। এরমধ্যে নতুন করে টোলের হার নির্ধারণ করা হবে। এমন তথ্য জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-স¤পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী।
তিনি বলেন, আপাতত টোল ছাড়া যানবাহন চলাচল করবে। তবে এরমধ্যে টোলের হার নির্ধারণ করে ইজারাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হবে। ইজারাদার নিয়োগ হলে টোল আদায় ও শৃঙ্গলা ফিরে আসবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া জানান, বুয়েট বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের পরামর্শে ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তত্ত্বাবধানে গত বছরের ১ আগস্ট থেকে সেতুটির সংস্কার কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রকচার লিমিটেড। সংস্কার কাজ শুরুর তিন মাসের মধ্যেই সেতুটি ট্রেন চলাচলের মজবুত ও উপযোগী করে তোলা হয়।
সেতুর পাটাতনের ওপর বিশেষ প্রযুক্তির কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন আর সেখানে পানি জমবে না। এবার সেতু সংস্কার করে একপাশে যুক্ত করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। যা গত কোরবানির ঈদের সময় পথচারীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। সেতু সংস্কার কাজের তিনমাসের মাথায় শুরু হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল। এতে সেতুটি জরাজীর্ণ থেকে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। একই সাথে কর্ণফুলী নদির উপর ওই স্থানে নতুন রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়াও চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদ পেয়েছে।