বৃহস্পতিবার- ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

জাহাজের ধাক্কায় রেলিং বাঁকার অজুহাত

কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ পেছালো আরও দু‘মাস!

জাহাজের ধাক্কায় রেলিং বাঁকার অজুহাতে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ পেছালো দু‘মাস
print news

ম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে নোঙর ছিড়ে একটি লাইটার জাহাজের ধাক্কা লাগে চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত কালুরঘাট সেতুতে। এতে সেতুর ৯ ও ১০ নম্বর স্প্যানের রেলিং সামান্য হয়ে যায়। আর এই অজুহাতে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ পেছালো আরও দু‘মাস।

আর এ নিয়ে চার দফা পেছাল সেতুটির সংস্কার কাজ। ফলে গত সাত মাস ধরে নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চট্টগ্রাম নগরবাসী ও বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দারা। এমন অভিযোগ করেছেন বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোমিন।

তিনি বলেন, আমরা কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর নতুন সেতু নির্মাণের জন্য আন্দোলন করেছি। সেই দাবি পাশ কাটিয়ে রেলওয়ে পূরনো সেতুটির বার্ধক্যের রোগ সারাতে জোড়াতালির সংস্কার কাজ শুরু করেছে। তাতেও ঠিকমতো যোগান দিচ্ছে না। দিনের পর দিন কাজ পেছাচ্ছে। এতে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। বিকল্প হিসেবে যে ফেরি দেওয়া হয়েছে তাতেও কম ভোগান্তি নেই। প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

তিনি বলেন, সংস্কার কাজের জন্য ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে সেতুটির ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। বলা হয়েছিল তিন মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হবে। কিন্তু সংস্কার কাজ শেষ করতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরে ৫ নভেম্বর এই সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হলেও মানুষ ও যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তুলতে পারেনি।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

সর্বশেষ গত এপ্রিলে সংস্কারকাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছিল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশল বিভাগ। কিন্তু এপ্রিল শেষে এখন মে মাস। এই সময়ে এসে জাহাজের ধাক্কায় রেলিং বাঁকা হওয়ার অজুহাতে ফের সংস্কার কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে আরও দুই মাস।

অর্থাৎ আগামী জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে সংস্কার কাজ। বাড়িয়েছেন ব্যয়ও। আর তাতেও শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না সেতু প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত বলেন, কখন থেকে গাড়ি চলবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, জুন-জুলাই থেকে গাড়ি চলতে পারে। তবে সময় ও ব্যয় বাড়ানোর বিষয়টি তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে যান।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, সম্প্রতি বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর তান্ডবে কালুরঘাট সেতুর ৯ ও ১০ নম্বর ¯প্যানের রেলিংয়ে কর্ণফুলী নদীতে নোঙর করা একটি লাইটার জাহাজের ধাক্কা লাগে। এতে সেতুর আন্ডার ¯¬্যাং গার্ডার, ওয়াকওয়ে, রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা সারাতে আরো দুই মাস সময় লাগবে। সব মিলিয়ে পুরো সংস্কারকাজ শেষ করে গাড়ি চলাচল শুরু করতে দুই মাস লেগে যেতে পারে।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

এদিকে চট্টগ্রাম-৪ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম জানিয়েছেন, তার সঙ্গে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছে। শিগগিরই সংস্কারকাজ শেষ হবে। কোরবানির ঈদের আগেই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সময়ক্ষেপণ করা মানে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেওয়া। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা উচিত। তারা যদি এভাবে কাজের সময় বাড়াতেই থাকে; তাহলে মানুষের দুর্ভোগের পাল্লাও বাড়বে। এছাড়া সময় যেভাবে বাড়বে তেমনি খরচও বাড়বে।

এ প্রকল্পের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা যদি সঠিক সময়ে কাজ শেষ না করেন; তাহলে জনগণের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি রাষ্ট্রের-সরকারেরও লোকসান হচ্ছে। কেননা, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়া মানে খরচ বেড়ে যাওয়া। সেতুর সংস্কারে জোড়াতালির কাজেও ঠিকমতো যোগান দেওয়া হচ্ছে না। সেতু নির্মাণে যেমন দীর্ঘসূত্রিতা, সংস্কার কাজেও ঠিক তেমনি দীর্ঘসূত্রিতা।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, কালুরঘাট সেতুর বিকল্প হিসেবে বর্তমানে দেওয়া হয়েছে তিনটি ফেরি। এর মধ্যে একটি বিকল। বাকি দুটির মধ্যে প্রায় সময় অচল হয়ে পড়ে একটি। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দুপারের চালক-যাত্রীদের। এপার থেকে ওপারে যেতে যেমন সময় বেশি লাগে, ঠিক তেমনি রোদ বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

তিনি আরও বলেন, সংস্কারকাজ আর দীর্ঘায়িত না করে যতদ্রুত সম্ভব সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হোক। সংস্কারকাজের মেয়াদ যাতে বারংবার পরিবর্তন করে দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে আর ফেলা না হয়। পাশাপাশি নতুন সেতু নির্মাণের বিষয়ে ত্বড়িৎগতিতে অগ্রসর হতে হবে সরকারকে। এতে বোয়ালখালীবাসীর দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ঘুচবে।

১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতু সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।

১৯৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কক্সবাজার-বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

তবে ২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণে সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। ২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুদফা সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। সেই সময়ও অন্যান্য যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চালু করা হয়েছিল।

ঈশান/খম/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show