
আবুল বশর। বয়স ৬৫। ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এডিশনাল ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার। অবসর নিয়েছেন ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে। এর মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। চাকরির সাথে দীর্ঘ ১২ বছর যুদ্ধের পর তিনি এখন ক্যান্সার মুক্ত।
ক্যান্সার জয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে ফুটফুটে গোলাপের মতো মুখে হাসি ছড়িয়ে দেন তিনি। গত ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সাক্ষাতের শুরুতে তিনি বলেন, আমাকে কি রোগীর মতো লাগছে?
আসলে আবুল বশরের চেহারা দেখলে বুঝা মুশকিল তিনি অসুস্থ। কিন্তু তিনি হাঁটছেন স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে। তারপরও তৃপ্তির হাসি দিয়ে তিনি বলেন, গত কয়েকমাস আগে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেফাতুজ্জাহান পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যখন বলেন, আমার শরীরে ক্যান্সারের কোন জার্ম নেই। তখন আমার খুব ভাল লাগছিল। মনে হচ্ছিল ডা. শেফাতুজ্জাহান আমার সন্তানের মতো। কারণ তার চিকিৎসায় আমি নতুন জীবন পেয়েছি।
আবুল বশর বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের বলতে চাই আপনারা সুচিকিৎসা চাইলে ডা. শেফাতুজ্জাহানের কাছে আসুন। ওনার থেকে চিকিৎসা নিন। ওনি এমন একজন ডাক্তার, প্রয়োজন সাপেক্ষে ক্যান্সার রোগীদের নিয়ে প্রচুর স্টাডি করেন। তারপর চিকিৎসা ব্যবস্থা দেন।
ক্যান্সার জয়ের আগে আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে আবুল বশর বলেন, ২০১১ সালের শেষের কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত থাকা অবস্থায় আমার মেরুদন্ডে ব্যাথা অনুভূত হয়। তখন চট্টগ্রামের একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি বলেন, আমার টিউমার হয়েছে। পরামর্শ দেন অপারেশনের। পরে পপুলার হাসপাতাল, এপোলো হাসপাতালসহ একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসকদের শরণান্ন হই। কিন্তু চিকিৎসা খরচ বেশি হওয়ায় অপারেশনে অপারগ ছিলাম।
একপর্যায়ে চট্টগ্রামের একজন হোমিও বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নিই। এতে বছর দেড়েক ব্যাথামুক্ত জীবন কাটায়। পরে ব্যাথা শুরু হলে হোমিও বিশেষজ্ঞ পরামর্শে ফের পপুলার হাসপাতালের শরাণাপন্ন হই। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলা হয় টিউমার ক্যান্সার। তখন যমদূতকে দেখতে পাচ্ছিলাম। তবুও নিরুপায় হয়ে পপুলার হাসপাতালে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিই। সেই অপারেশনের পরও ব্যাথা কমেনি। পরে পিজি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বলা হয় অপারেশন হয়েছে আংশিক। টিউমার পুরোটাই রয়ে গেছে ভেতরে।
এরপর পিজি হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে ফের অপারেশনে গেলাম। এরপর কয়েকছর ভাল ছিলাম। কিন্তু আমি একরকম পঙ্গু হয়ে যায়। স্ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটাচলা করতে হচ্ছে। পরে ফের ব্যাথা শুরু হয়। তখন আমি এক প্রকার কাহিল হয়ে পড়ি। এ অবস্থায় পিজি হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা আমাকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেফাতুজ্জাহানের কাছে রেফার করেন। ব্যাংকে চাকরির সুবাধে আমিও থাকতাম হাসপাতালের কাছে আগ্রাবাদ ব্যাংক কলোনিতে। সেখানে থেকে দীর্ঘ এক বছরের চিকিৎসায় আমি ক্যান্সার মুক্ত। তবে এই চিকিৎসায় আমার ৬০ লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে।