
দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ বিভিন্ন মসল্লার দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। যার যৌক্তিক কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছিলেন না বাজার মনিটরিংয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো।
এর মধ্যে গত এক মাস আগে রমজানের সময়ও দেশি পেঁয়াজ বিক্রয় হয়েছিল প্রতিকেজি ৩০-৩৫ টাকা দরে। সেখানে বর্তমানে এ্ই পেঁয়াজ বিক্রয় হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা দরে। একইভাবে আদার কেজি যেখানে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রয় হয়েছিল। সেখানে সেই আদা বর্তমানে বিক্রয় হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকা দরে।
রসুন যেখানে ১০০ টাকা দরে বিক্রয় হয়েছিল সেখানে এখন বিক্রয় হচ্ছে ২৫০ টাকার উপরে। অথচ এই সময়ে দেশে কোন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ চাহিদার চেয়ে আরও অনেক বেশি মজুদ রয়েছে।
তবে রসুন ও আদা আমদানি অব্যাহত রয়েছে চীন থেকে। আমদানিকারক ও আড়তদাররা পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দাম বৃদ্ধির কথা জানালেও আমদানি সত্ত্বেও আদা ও রসুনের দাম বাড়তি থাকায় বাজার মনিটরিংয়ে নিয়োজিত সংস্থাগুলো বিস্মিত।
আর এর কারণ অনুসন্ধানে রবিবার (২১ মে) সকাল ১১টায় অভিযানে নামে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। দুপুর ২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে আমদানিকারক, আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের কারসাজির তথ্য পান। একপর্যায়ে দালাল চক্রের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে আদালত। এতে অন্তত ৬০০ দালাল চক্রকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক রবিবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অনুসন্ধানে দেখা গেছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ডিমান্ড অর্ডারের (ডিও) একটি ক্রয় রসিদ ১০ জনেরও বেশি মানুষের কাছে বিক্রী হয়েছে। আর এতেই ভোগ্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। তাছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে যেখানে মূল্য তালিকা ও ক্রয় রশীদ সংরক্ষণ করার কথা সেখানে তা না করে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা যার যার ইচ্ছেমতো দামে ভোগ্যপণ্য বিক্রয় করছে। আর এর মূল্য যোগাতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের।
তিনি বলেন, অভিযানে দোকানে মূল্য তালিকা না থাকা, ক্রয় বিক্রয় রশীদ সংরক্ষণ না করার মতো অনিয়মের অপরাধে বার আউলিয়া ট্রেডার্সকে ৫ হাজার টাকা, ফরিদপুর বাণিজ্যালয়কে ৩ হাজার টাকা ও জাহেদ নামের একজন ব্যাপারিকে ২ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে। সেই সাথে অস্বাভাবিক মূল্যে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ ভোগ্যপণ্য বিক্রির অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
উমর ফারুক বলেন, বাজারে পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীর মধ্যে মধ্যসত্ত্বকারী একটা সিন্ডিকেট আছে যারা পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে অনেকাংশে দায়ী। সিন্ডিকেট ভাঙতে আমরা বিভিন্ন ট্রেডিংয়ের দোকান থেকে ছয় শতের উপরে মধ্যসত্বভোগীদের নাম এবং মোবাইল নাম্বার সংগ্রহে নিয়েছি। যাদের মাধ্যমে হাত বদল হতে হতে একটি পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এখানে মধ্যস্বত্বভোগীদের পাশাপাশি মিল মালিকদের কারসাজিও আছে। এই বিষয়টি গুরত্বসহকারে নিয়ে এদের ট্রেড লাইসেন্স চেকিংসহ পরবর্তিতে এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, খাতুনগঞ্জের অন্তত ৬০০ মধ্যসত্ত্বভোগী দালালের নামের তালিকা আমাদের সংগ্রহে আছে। যে কোন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সরবরাহ কমার অজুহাতে যাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর বিষয়েও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।