
নারকীয় গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী আজ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত পৈশাচিক এ হামলায় সেদিন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন অনেকে।
আহতদের একজন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি সেদিনের দু:সহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন এখনো। তাঁর শরীরে এখনও বিদছে গ্রেনেডের ৪০টি স্পিøন্টার। গ্রেনেডের ক্ষত ও সেদিনের দুঃসহ কষ্টের দিনগুলো এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে পারছেন না তিনি। এ মামলার ৪৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে অন্যতম রাজ স্বাক্ষী তিনি।
ড. হাছান মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। এ হামলার দায় বেগম জিয়া এড়াতে পারেন না। ওইদিন যখন প্রথম গ্রেনেড ব্লাস্ট হয়, আমি ভেবেছিলাম হয়তো গাড়ির টায়ার চলে গেছে, এরপর দ্বিতীয় গ্রেনেড যখন ব্লাস্ট হয় তখন আমার পিঠে অনেকগুলো পিঁপড়ে কামড় দিলে যেমন হয়, সেরকম অনুভূত হচ্ছিল।
গ্রেনেড হামলার ওই মুহুর্তে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য অস্থায়ীভাবে ট্রাকের উপর তৈরিকৃত মঞ্চের পাশেই ছিলেন তিনি। ঘাতকদের গ্রেনেড হামলা শুরু হওয়ার সাথে সাথে তিনিসহ শেখ হাসিনার পাশে থাকা সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা মানব দেয়াল রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষার চেস্টা করেন। এসময় তার শরীরে অসংখ্যা গ্রেনেডের স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তৎকালীন দুই নারী নেত্রীর সহযোগীতায় তিনি প্রথমে ঢাকার সিকদার মেডিকেলে ভর্তি হন। সেখানে ৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৯শে আগস্ট তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বেলজিয়ামে যান। বেলজিয়ামে কয়েকটি স্পিøন্টার বের করতে পারলেও এখনও ৪০টি স্পিøন্টার রয়ে গেছে। এসব স্পিøন্টার বের করতে গেলে নার্ভ কেটে বের করতে হবে। ফলে মৃত্যুও হতে পারে। তাই তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাকি স্পিøন্টার বের করেননি।
গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ড. হাছান মাহমুদের রক্তাক্ত একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ছবিতে দেখা যায় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত ড. হাছান মাহমুদ রক্তে রঞ্জিত। রক্তে লাল হয়ে গেছে তাঁর পরনের শার্ট। খুলে গেছে শার্টের বোতাম। কাঁদছেন হাছান মাহমুদ। দলের নারী নেত্রী বর্তমানে ঢাকা জজকোর্টে আইনপেশায় নিয়োজিত অ্যাডভোকেট রুবিনা মিরা ও অপর এক নেত্রীর কাধে ভর দিয়ে হাসপাতালের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
তৎকালীন শেখ হাসিনার একান্ত সহকারী ড. হাছান মাহমুদ ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ স¤পাদক ছিলেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনার নির্দেশে পিএইচডি করতে বেলজিয়াম যান। সেখানে বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ও পরে দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এসময় বাংলাদেশের আলোচিত আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকান্ড নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তিনি নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তৎকালীন জোট সরকারের বিভিন্ন দমন পীড়ন ও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় বহির্বিশ্বে তিনি কুটনৈতিক তৎপরতা চালান। পরে পিএইচডি অর্জন শেষে দেশে ফিরলে শেখ হাসিনার একান্ত সহকারীর দায়ীত্ব পালন করেন।
তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এস এম কিবরীয়ার সাথে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মনিটরিং সেলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিবেশ ও বন বিষয়ক স¤পাদক হন। পরবর্তীতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন।