
প্রাণহানিসহ ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত ও জানমাল রক্ষায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় পাঁচ উপজেলাসহ জেলার ১৫ উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। শুক্রবার (১২ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত ও জানমাল রক্ষায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় পাঁচ উপজেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। দুর্যোগ পরবর্তি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রাথমিক চাহিদা মিটানোর জন্য ১৫টি উপজেলায় ত্রাণ হিসেবে চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রস্তুত রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৃহ¯পতিবার ঘূর্ণিঝড় মোখার মোকাবিলায় প্রস্তুতিমূলক সভা করেছেন।
বাঁশখালী উপজেলায় ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও সাইদুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, উপজেলার উপকূলীয় এলাকা ছনুয়া, খানখানাবাদ, গন্ডামারা, সরল, বাহারছড়া, কাথরিয়া, সাধনপুর, পুকুরিয়া, পুইছড়ি, শেখেরখীল ও শীলকুপ এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার এবং মুজিব কিল্লাসহ ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাগরে যে সব জেলেরা রয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৭১টি ইউনিটে এক হাজার ৪২০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘুর্ণিঝড়ের ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এবং পাহাড় ধস এড়াতে পাহাড়ি এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক মসজিদে জুমার নামাজের বয়ানে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে বলার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সব ইমামকে বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলার ইউএনও মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খোলা থাকবে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। জেলা প্রশাসন থেকে ৪০ হাজার টাকা ও ১০ মেট্রিক টন খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সচেতনতার জন্য মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে।
সীতাকুন্ড উপজেলার ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুুত করা হয়েছে ৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি ভবনগুলোও প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে জরুরি সেবা দিতে ১২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এক হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক।
সন্দ্বীপ উপজেলার ইউএনও সম্রাট খীসা বলেন, উপজেলায় ১১২টি সাইক্লোন শেল্টারসহ মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজসহ মোট ১৬২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উড়িরচরে তিনটি মুজিব কিল্লা ও মুছাপুর ইউনিয়নে একটি মুজিব কিল্লা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুুতি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে তিন হাজার ভলান্টিয়ার। সঙ্গে প্রস্তুত রয়েছে যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এখান থেকে জরুরি হটলাইন নম্বরে (০২৩-৩৩৩-৬৩০-৭৩৯) ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও সেবা পাবেন চট্টগ্রামবাসী। পাশাপাশি জানমালের ক্ষতি কমাতে ৪১টি ওয়ার্ডে ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানলে যেন সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায় এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধার কাজ সর্বোচ্চ গতিতে পরিচালিত হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা ও ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবেগ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জরুরি যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।