বৃহস্পতিবার- ২৭ মার্চ, ২০২৫

চউকের ভুমি শাখার পিয়ন সাইফুলের হাতে আলাদিনের চেরাগ

দুদককেও কেয়ার করেননা তিনি!

চউকের ভুমি শাখার পিয়ন সাইফুলের হাতে আলাদিনের চেরাগ
print news

ট্টগ্রাম শহরের সলিমপুর এলাকায় কিনেছেন ৩ কাঠার প্লট, সাড়ে ৫ কাঠার প্লট কিনেছেন পটিয়া পৌরসভায়। পৌরসভার খান মোহনা এলাকায়ও কিনেছেন ২ কানি জমি। গত তিন বছরে সপরিবারে করেছেন তিনবার ওমরা হজ। মাকেও করিয়েছেন বড় হজ। বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবেও গচ্ছিত রেখেছেন কোটি টাকা।

এমন অর্থ-বিত্তের মালিক এখন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) ভুমি শাখার পিয়ন সাইফুল হক। গত সাত বছর ধরে তিনি চউকের এই শাখায় পিয়ন পদে কর্মরত আছেন। কিন্তু পিয়ন হিসেবে চউকের কেউ তাকে চিনেন না। কারণ তিনি বসেন রিসিপশন ডেস্কে।

গত রবিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে তার হাতে এমন আলাদিনের চেরাগ পাওয়া নিয়ে জানতে চউকের ভুমি শাখায় গিয়ে ভেবাছেকা খেতে হয় এই প্রতিবেদককে। কয়েকজেনর কাছে জিজ্ঞেস করার পর সাইফুল হক নামে একজনকে চেনার কথা বললেও পিয়ন সাইফুল নামে কেউ নেই বলে জানান।

শেষে রিসিপশনে গিয়ে কথা বলার পর নিশ্চিত হই, তিনিই পিয়ন সাইফুল। রিসিপশনে বসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাইফুল হক বলেন, চিঠিপত্র আসলে আমি রিসিভ করি। কিন্তু আমি ভুমি শাখার পিয়ন পদে আছি। কত বছর ধরে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাত বছর ধরে আছি। এতবছর ধরে কিভাবে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুমি বিভাগসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে আমাকে দিতে চেয়েছিল, আমি যায়নি। এখানে (চউক) ভাল আছি আর কি।

চউকে নানা অনিয়ম ও অবৈধ কাজে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ার কথা জানালে সাইফুল হক বলেন, চউকের ভুমি সংক্রান্ত কাজে আমি মানুষকে সাহায্য করি। এতে দুই-একশ টাকা দিলে নেয়, কারো কাছ থেকে তো জোরপূর্বক কোন কিছুই কখনো নিইনি।

সাইফুল হক বলেন, আমার কাছে তো অনেক সাংবাদিকও আসে। সবার সাথে তো আমার সম্পর্ক ভাল। তাছাড়া আমার চেয়ে অনেক বেশি অনিয়ম করে চউকের প্লান শাখাসহ বিভিন্ন শাখায়। ওইসব শাখার পিয়ন থেকে কর্মকর্তাদের এখন কাড়ি কাড়ি টাকা। শুধু আমাকে চোখে পড়ল আপনার? এমন আবেগঘন প্রশ্ন করেন তিনি।

চট্টগ্রাম শহরের সলিমপুরে ৩ কাঠার প্লট, পটিয়া পৌরসভায় সাড়ে ৫ কাঠার প্লট এবং খান মোহনা এলাকায় দুই কানি জমি কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল হক বলেন, খান মোহনা এলাকায় দুই কানি নয়, ১৪ গন্ডা বা ২৮ শতক জমি কিনেছি। পটিয়া পৌরসভায় কোন জমি কিনিনি। সলিমপুর আবাসিক এলাকায় ৩ কাঠার একটি প্লট চউক থেকে বরাদ্দ পেয়েছি। সেটি বিক্রি করে দিয়েছি। কত টাকায় বিক্রি এবং কত টাকায় এসব জমি কিনেছেন তা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। একইভাবে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে নগদ কোটি টাকা গচ্ছিত থাকার বিষয়টিও এড়িয়ে যান তিনি।

তবে সস্ত্রীক ও শ্যালকের স্ত্রী ও তার পরিবারসহ একাধিকবার হজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, মাকে বড় হজ করিয়েছি। আর গেল বছর আমি স্ত্রীসহ সপরিবারে ওমরা করেছি। এর আগে একবার ওমরা করেছি আমি। এত টাকা কোথায় কিভাবে পেলেন জানতে চাইলে তিনি নিরবতা প্রদর্শন করেন।

অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে দুদকের তৎপরতার বিষয়ে জানতে চাইলে একগাল হেসে তিনি বলেন, আরে ভাই দুদক এখানে প্রতিদিন আসে। কিছু নিয়ে চলে যায়। দুদক কোন ব্যাপার না। একপর্যায়ে তিনি এসব বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে চলে যান।

স্থানীয়রা জানান, সাইফুলের বাড়ি পটিয়া উপজেলায়। গত এক দশক আগে চউকের ভৃুমি শাখায় পিয়ন পদে যোগদানের পর থেকে তার আর্থিক অবস্থা ফুলে ফেঁপে উঠে। তবে পটিয়া পৌরসভায় প্লট ও জমি কেনার পর হাতে আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়ার বিষয়টি মানুষের নজরে পড়ে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম শহর ও পটিয়া পৌরসভায় কেনা প্লট ও জমির মূল্য প্রায় চার কোটি টাকার কাছাকাছি বলে জানান স্থানীয়রা। তবে মানুষের নজর এড়ানোর জন্য পরিবার নিয়ে তিনি পটিয়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বাসাটিও অভিজাত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পটিয়া পৌরসভার এক ব্যক্তি জানান, সাইফুল হক মূলত একজন ভুমিদস্যু। ভুমি নিয়ে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে তিনি এখন অন্তত ১০ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক।পটিয়ার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে তার নগদ কোটি টাকা জমা রয়েছে। চউক থেকে প্রতিদিন তার আয় লাখ টাকার উপরে। চউক যেন তার হাতের আলাদিনের চেরাগ।

এ বিষয়ে জানতে চউকের ভুমি শাখার কর্মকর্তা সাদেকুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে চউকের পরিচালনা বোর্ডের মেম্বার মো. আলী শাহ বলেন, বিষয়টি আমি বোর্ড সভায় উপস্থাপন করবো। দূর্নীতিবাজ পিয়ন সাইফুলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জোর প্রচেষ্টা চালাব।

ঈশান/খম/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page