বুধবার- ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

চট্টগ্রামের সব থানায় শুরু হল পুলিশিং কার্যক্রম, সড়কে ট্রাফিক

চট্টগ্রামের সব থানায় শুরু হল পুলিশিং কার্যক্রম, সড়কে ট্রাফিক

রকারের পতনের একসপ্তাহ পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামেও শুরু হলো পুলিশিং কার্যক্রম। সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরের ১৬ থানায় যোগ দেন পুলিশ ফোর্স। এরপর থেকে থানায় শুরু হয় সাধারণ ডায়েরিসহ অভিযোগ গ্রহণের কাজ।

একই সাথে নগরীর নিউমার্কেট মোড়, চকবাজার মোড়, জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ বন্দর এলাকায় সড়কের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে যোগ দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও। এতে পূর্বের চেহারা ফিরে আসে সড়কে।

সোমবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতন আন্দোলনে চট্টগ্রামে থানায় ও সড়কে পুরিশের উপর হামলা হয়েছে। এতে পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার ভয়ে কর্মক্ষেত্র ছেড়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হওয়ায় পুলিশ থানায় ও সড়কে কর্মক্ষেত্রে ফিরেছে। ছাত্ররা পুলিশকে সহযোগীতা করছে।

তিনি বলেন, পুলিশ না থাকলেও শিক্ষার্থীরা এতো দিন খুবই সুন্দরভাবে ট্রাফিক সেবা দিয়েছে। কিন্তু থানার কার্যক্রম চালাতে পারিনি। সোমবার সকাল থেকে থানা কার্যক্রম চালু হয়েছে, ট্রাফিক পুলিশও তাদের দায়িত্বে ফিরেছে। এতে সহযোগিতা করছে শিক্ষার্থীরা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুনির হোসেন বলেন, আমি বিভিন্ন কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝানো চেষ্টা করেছি। আমি বলেছি পুলিশ শিক্ষার্থীদের শত্রু নয়, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে অর্ডার দিয়েছে আমরা সে অর্ডার পালন করেছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। আমরা কেন শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ ভাববো। শিক্ষার্থীরা আমাদের ভাই, প্রতিবেশি আত্নীয়স্বজন। আমাদের উর্ধ্বতনরা হুকুমের মাধ্যমে পুলিশ ছাত্র যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা এ দেশটা সুন্দরভাবে গড়তে চাই। দেশকে নতুনভাবে এগিয়ে নিতে চাই।

সূত্রমতে, চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, চকবাজার, বায়েজিদ, খুলশি, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, ডবলমুরিং, বাকলিয়া, কোতোয়ালি, সদরঘাট, হালিশহর, বন্দর, ইপিজেট, পতেঙ্গা, কর্ণফুলী থানায় কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ। সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় গিয়ে দেখা যায়, কসমোপলিটন এলাকা থেকে সাধরণ ডায়েরি করতে থানায় এসেছেন সৈয়দ মিয়া নামের এক ব্যক্তি। মোবাইলে হুমকী দেওয়ার ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন থানায়। কয়েকদিন আগে হুমকি দিলেও থানা বন্ধ থাকায় জিডি করতে পারেননি।

চান্দগাঁও থানায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন শিক্ষার্থীও দায়িত্ব পালন করছেন থানায়। পুলিশের মনোবল ফিরে আসার জন্য পুলিশের পাশাপাশি থানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও কাজ করছে।

পাঁচলাইশ থানা অফিসার ইনচার্জ সন্তোাষ কুমার চাকমা বলেন, থানার কার্যক্রম শুরু করেছি। অনেক পুলিশ এখনও থানায় এসে পৌঁছতে পারেন নি। তবে সবার সঙ্গে যোগযোগ রক্ষা হয়েছে সবাই থানায় যোগ দিবেন। এতদিন কার্যক্রম না চলায় অনেক কাজ জমে গেছে। তা এক সঙ্গে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা (টিআই) নাদিবুর রহমান বলেন, আমাদের উপর হামলা হয়েছিল, থানায় ও পুলিশ বক্সে হামলা হয়েছিল, আমাদের অনেক সদস্যের বাড়িঘরে পর্যন্ত হামলা হয়েছিল। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। আমরা সড়কে আসতে ভয় পাচ্ছিলাম। তবে সোমবার সকাল থেকে কাজ শুরু করেছি। এতে ছাত্ররাও আমাদের সহযোগিতা করছেন।

পুলিশ সদস্যরা বলছেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। আগামীতে জনগণের পক্ষের হয়ে কাজ করতে চায় পুলিশ। কোন নেতা, এমপি মন্ত্রীর গোলাম হয়ে পুলিশ কাজ করতে চায় না। আমরা কোন রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করতে চাই না। দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষত অধঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সার্বিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা চায় পুলিশ সদস্যরা।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ছাত্র সমন্বয়কদের নিয়ে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজে নেমেছি। এখন আইনশৃঙ্খলা আরও উন্নতি হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট রাতে অগ্নিসংযোগ হামলা থেকে বাঁচতে পুলিশ শূন্য হয়ে যায় মহানগরের সব থানা। অনেক থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, লুটপাট হয় থানার অস্ত্র ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট।

ঈশান/খম/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page