আদা ও রসুন সবরকম রান্নার নিয়মিত উপাদান। সে হিসেবে নিত্যপণ্য এটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যোগান সংকটের কারণে চট্টগ্রামের সবকটি বাজারে এই নিত্যপণ্যের দাম বেশ চড়া। বর্তমানে খুচরা বাজারে আদা প্রতিকেজি বিক্রয় হচ্ছে ১৯০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। আর রসুন প্রতিকেজি বিক্রয় হচ্ছে ৪০০ টাকার বেশি।
ফলে আদা-রসুনের দামের এই তেজে গা জ্বলছে ক্রেতার। ক্রেতাদের ভাষ্য, গত কয়েক মাস ধরে আদা-রসুনের দাম বেশ বেড়েছে। যা সাধারণ ক্রেতা তো দুরের কথা, মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। আদা-রসুন কিনতে গেলে গা জ্বালা শুরু হয়।
চট্টগ্রাম মহানগরীর ঝাউতলা বাজারে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে আসা ক্রেতা রোকেয়া পারভিন বলেন, বাজারে সব জিনিসের মূল্য উর্ধ্বমুখী। এরমধ্যে কিছু পণ্যের দাম হঠাৎ বাড়লেও আবার কিছুদিন পর একটু কমে। কিন্তু আদা ও রসুনের দাম সেই কোরবানির সময় বেড়েছে আর কমছে না। এই নিত্যপণ্য কিনতে এসে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ এখন ক্রয় ক্ষমতা হারিয়েছে।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, দেশীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় আদা-রসুনের চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকার কারণে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এই দুটি পণ্যের বাজার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে চীন। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে চীনের রসুনের আমদানি কিছুটা থাকলেও আদার আমদানি একদম শূণ্যের কোঠায়। ফলে বাজারে পর্যাপ্ত আদা ও রসুন না থাকায় দাম বেশ চড়া।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, আড়তে চীনের রসুনের যোগান কিছুটা থাকলেও চীনা ও দেশি আদার যোগান একদম শূণ্যের কোঠায়। এ অবস্থায় বর্তমানে আদার যোগান মেটাচ্ছে ভারতের কেরালা, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার থেকে আমদানি করা আদায়।
আমদানিকারকরা জানান, বর্তমানে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি ইন্দোনেশিয়ার আদা বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২২০ টাকায়। ভারতের কেরালার আদা বিক্রয় হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। অথচ গত বছর এদিনে আমদানি আদা বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি।
তাছাড়া দেশি এক কোষাযুক্ত রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকা। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকার বেশি। আর পাইকারিতে আমদানি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত। যা খুচরায় বিক্রয় হচ্ছে ২৩০ টাকা পর্যন্ত। অথচ গতবছর এদিনে রসুন বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি।
খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যমতে, গত কয়েকবছর ধরে আমদানির ঋণপত্র খুলতে গিয়ে নানা জটিলতা, ডলার মূল্য, আমদানি রেট ও পরিবহন খরচ বাড়তির কারণে আদা ও রসুনের দাম বাড়তি। তাছাড়া দেশীয় পর্যায়ে এ দুইটি পণ্য উৎপাদনের ঘাটতির পাশাপাশি চীনের আদার বাজারে চড়া দামের কারণে আমদানিকারকেরা পিছিয়ে পড়ায় সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে আদার সংকট মেটাতে নির্ভর করতে হচ্ছে ভারত, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের আদার ওপর।
খাতুনগঞ্জ হামিদউল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ স¤পাদক মো. ইদ্রিচ বলেন, বাজারে ক্রেতার চাহিদা মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ আদা ও রসুন নেই। বর্তমান ব্যবসায়ীরা যে দরে আদা বিক্রি করছে এতে গড়ে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা লোকসান থাকবে ব্যবসায়ীদের। তবে রসুনের বাজার এ সপ্তাহে কিছুটা কমতির দিকে হলেও যোগান সংকটের কারণে আবারও বেশ চড়া হতে পারে।
চাক্তাই ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাংগঠনিক স¤পাদক মো. ফোরকান বলেন, কয়েক মাস ধরে দেশে আদা-রসুন আমদানি কমে এসেছে। তাছাড়া বাজারে আদার আমদানি সংকট রয়েছে। ফলে সরবরাহ সংকটে পাইকারি বাজারে পণ্য দুটির দাম বাড়তির দিকে।
চাক্তাই আদা ও রসুনের আড়তদার সামশুল আলম বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত আদা ও রসুনের সংকট রয়েছে। খাতুনগঞ্জের বাজারে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ ট্রাক আদা ও রসুনের প্রয়োজন। সেখানে কয়েকদিনে মিলে আসে একট্রাক আদা ও রসুন। অন্যান্য বছরের তুলনায় যথেষ্ট যোগান সংকট রয়েছে। যার ফলে আদার বাজার বেশ চড়া।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে আদার চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৫ মেট্টিকটন। গত অর্থবছরে দেশে আদার উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ মেট্টিকটন। আমদানি করা হয়েছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৫ মেট্টিকটন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন কমে হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার মেট্টিকটন।
গত অর্থবছরে ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে হয়েছে ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত আদা আমদানি করা হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৩৮ মেট্টিকটন এবং রসুনের চাহিদা রয়েছে ৭ লাখ ১ হাজার টন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার টন। সে হিসাবে ঘাটতি খুব বেশি নয়।