শনিবার- ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

চট্টগ্রামে আনন্দ-আড্ডা ও আপ্যায়নে ঈদ উদযাপন

চট্টগ্রামে আনন্দ-আড্ডা ও আপ্যায়নে ঈদ উদযাপন

ট্টগ্রাম শহর ও গ্রামের বিভিন্ন ঈদগাহ ময়দানে নামাজ শেষে কোলাকুলি, আড্ডা ও আপ্যায়নের মধ্যদিয়ে উৎসবের আমেজে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর।

এর মধ্যে চোখে পড়ার মতো ব্যতিক্রম আয়োজন ছিল নগরীর খুলশীর সৃজনী মাঠে। ছিন্নমূল মানুষকে ঈদের আনন্দে শামিল করার উৎসবের আয়োজন ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনেরও।

নগরীর বিপ্লব উদ্যানে এই উৎসবে মেতে উঠেন নগরীর পথশিশু, ভাসমান মানুষ, বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল মানুষেরা। পাশাপাশি সর্বসাধারণের জন্যও উন্মুক্ত ছিল এই উৎসব।

ঈদের দিন সকাল ১০টায় দু‘দিন ব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। উৎসবে নাগরদোলা, সুইমিংপুল, জা¤িপংসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যেবাহী খেলনায় বিনামুল্যে চড়ার সুযোগ পাচ্ছেন সবাই। পাশাপাশি আনলিমিটেড খাবারের সুযোগ পাচ্ছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিরিয়ানি, সেমাই, পায়েস, শরবত, ফুসকা, আইসক্রিম ইত্যাদি।

চসিক মেয়র ড. শাহাদাত হোসেন উেেদ্বাধনী বক্তব্য শেষে ছিন্নমূল শিশুদের সালামিও প্রদান করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, এই আয়োজন ধনী-গরিব সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে ঢুকতে কাউকে বাধা দেয়া হবে না। ছিন্নমূল মানুষ ও পথশিশুরা আনন্দে কাটাবে। রমজান আমাদেরকে শিক্ষা দেয় ধনী-গরিব সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে থাকার।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার জামাল উদ্দিন বলেন এই নগরে এমন হাজারো ছিন্নমূল মানুষ আছেন যাদের ঝুপড়ি ঘরে কখনও ঈদের আনন্দ পৌঁছে না। তারা না পারেন গ্রামে যেতে, আবার না পারেন শহরের উৎসবের অংশ নিতে! সেসব পথশিশু, ভাসমান মানুষদের ঈদকে আনন্দে রাঙানোর জন্য দু‘দিনব্যাপী ঈদ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে প্রায় ৫ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। বিপ্লব উদ্যানকে একটি শিশুপার্কে রূপান্তর করা হয়েছে। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রতিবেশী হিসেবে প্রতিবেশীর দায়িত্ব পালন করি।

অপরদিকে নগরীর আকবরশাহ ও খুলশীর এলাকার মানুষের জন্য সৃজনী মাঠে সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়। পাহাড়তলী পুলিশ বিট ফাঁড়ি জামে মসজিদের খতিবের পরিচালনায় ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ আদায় করা হয়।

নামাজ শেষে শিশুদের জন্য রঙিন বেলুন, মুসল্লিদের জন্য শরবত ও সেলফি তোলার উৎসবের আয়োজন করা হয় বলে জানান ঈদ উদযাপন কমিটি ও জামে মসজিদের সাধারণ স¤পাদক মুক্তার হোসেন।

তিনি বলেন, ঈদের খুশি সবার জন্যই। তাই দুটি ওয়ার্ড, থানার বসবাস করা মানুষদের একত্রে নামাজ আদায়ের জন্য এ আয়োজন। আশপাশের এলাকায় রেলে কর্মরতদের কোয়ার্টার হওয়ায় এটি রেল পরিবারের সদস্যদের অঘোষিত মিলনমেলায় পরিণত হয়।

এই দুই এলাকা ছাড়াও নতুন জামা-পাঞ্জাবি-পায়জামা পড়ে ছোটবড় সবাই নগরীর বিভিন্ন ঈদগাহ ময়দান ও মসজিদে ঈদের জামাত আদায় করেছেন। নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেছেন। বাসা-বাড়িতে গিয়ে কুশল বিনিময় করেন। ঢুঁ মেরে ঈদের সালাম-শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুরুব্বিদের।

চলছে সেমাই, ফিরনি, পায়েস, চটপটি, বিরিয়ানিসহ হরেক পদের খাবারের আপ্যায়ন। শিশুদের প্রধান আকর্ষণ ঈদের সালামিও দেওয়া-নেওয়া চলছে হরদম। নারীরাও নিজেদের পছন্দের শাড়ি-কাপড় পড়ে ঘুরতে বের হন। এভাবে নগরীর ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের বন্যা।

নগর ছাড়াও এবার দীর্ঘ ছুটিতে গ্রামে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে স্বপরিবারে চলে গেছেন চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের অনেকে। এই যাত্রায় প্রতিবার দুর্ভোগ পোহালেও এবার অভিযোগ ছিল অনেক কম। যানজটে নাকালের কথা শোনা না গেলেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ছিল সবার মুখে মুখে।

এদিকে নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের প্রধান জামাত এবং দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দুই জামাতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশ নেয়। সোমবার সকাল ৮টায় এবং সাড়ে ৮টায় দুই ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম ঈদ জামাতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব হযরতুল আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। আর দ্বিতীয় ঈদ জামায়াতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহর পেশ ইমাম।

ঈদ জামাতে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে দোয়া করা হয়। এছাড়া মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের জামাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও অংশ নেন। নামাজ শেষে তারা ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করেন।

এছাড়া লালদীঘি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন শাহী জামে মসজিদেও ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সকাল ৮টায়। একই সময়ে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুর বাজার জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দিকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদে (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন)।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page