বুধবার- ২৬ মার্চ, ২০২৫

চট্টগ্রামে আ‘লীগ নেতাদের হাতে আরও ৩৪৫ অস্ত্র!

লুন্ঠিত অস্ত্র বাকি ১৯৮, উদ্ধার অভিযান শুরু

চট্টগ্রামে আ‘লীগ নেতাদের হাতে আরও ৩৪৫ অস্ত্র!
print news

ট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতাদের হাতে বৈধ অস্ত্র সংখ্যা ৫২৩ টি। লাইসেন্স বাতিলের পর থানায় জমা হয়েছে ১৭৮টি অস্ত্র। এখনো হাতে রয়েছে গেছে ৩৪৫টি অস্ত্র। যা দ্রুত জমা পড়বে এমন আশা করছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

একইভাবে বৈষম্যবিরোধি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ৮টি থানা ও ১টি ফাঁড়ি থেকে লুন্ঠিত হয়েছে ৮১৫টি অস্ত্র ও ৮২ হাজার ২৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬১৭টি অস্ত্র ও ৬৬ হাজার ৮৫৮ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এখনো উদ্ধার হয়নি ১৯৮টি অস্ত্র। যা উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে যৌথবাহিনী।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কাজী তারেক আজিজ। তিনি জানান, অবৈধ ও লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে ৪ সেপ্টেম্বও থেকে সারা দেশে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে।

উদ্ধার অভিযানের অংশ হিসেবে ভিআইপিদের কাছে থাকা লাইসেন্স করা অস্ত্রগুলো অবৈধ ঘোষণা করে সেগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু লাইসেন্স বাতিলের পর চট্টগ্রাম মহানগরে ৫২৩টি বৈধ অস্ত্রের মধ্যে জমা পড়ে ১৭৮টি অস্ত্র।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র জমা পড়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায়। এই থানায় লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা পড়ে ৪৭টি। এরপর পাঁচলাইশ থানায় জমা পড়ে ২৯টি অস্ত্র। চান্দগাঁও থানায় ২৫টি, খুলশী থানায় ২৪টি, সদরঘাট থানায় ১০টি, ডবলমুরিং থানায় ১০টি, চকবাজার থানায় ৭টি, পাহাড়তলী থানায় ৫টি, আকবরশাহ থানায় ৫টি, বন্দর থানায় ৫টি, কর্ণফুলী থানায় ৪টি, হালিশহর থানায় ৩টি, বাকলিয়া থানায় ২টি, বায়েজিদ থানায় একটি ও পতেঙ্গা থানায় একটি অস্ত্র জমা পড়েছে।

এছাড়া বৈষম্যবিরোধি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ৮টি থানা ও ১টি ফাঁড়ি থেকে লুন্ঠিত হয়েছে ৮১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৮২ হাজার ২৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬১৭টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬৬ হাজার ৮৫৮ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে ৬৮টি অস্ত্র অচল পাওয়া গেছে। ৫৪৯টি অস্ত্র মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া ১৯৮টি অস্ত্র ও ১৫ হাজার ৩৯৪ রাউন্ড গোলাবারুদ দুষ্কৃতকারীদের কাছে রয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১০৫টি ৭.৬২ এমএম চায়নিজ রাইফেল, ৬২টি এসএমজি, ১টি এলএমজি, ৪৫টি ৭.৬২ এমএম পিস্তল, ৯৫টি ৯ এমএম তারাশ পিস্তল, ১৫টি ৯ এমএম সি-জেড পিস্তল ও একটি ৯ এমএম পেট্রো বেরেটা পিস্তল (মামলার আলামত হিসেবে সংরক্ষিত), ৪১৪টি ১২ বোর শটগান, ৭৬টি ৩৮ এমএম গ্যাসগান।

লুণ্ঠিত গোলাবারুদের মধ্যে আছে, ৩৭ হাজার ৬৫৪ রাউন্ড রাইফেল, এসএমজি ও এলএমজির গুলি, ১৪৭০ রাউন্ড ৭.৬২ এমএম পিস্তলের গুলি, ৫২০০ রাউন্ড ৯ এমএম পিস্তলের গুলি, ২০ হাজার ৫০০ রাউন্ড রাবারবল কার্তুজ, ১৫ হাজার লিডবল কার্তুজ, ১ হাজার ৮০০ রাউন্ড টিয়ারশেল, ২০০টি টিয়ারশেল হ্যান্ড গ্রেনেড, ২৫০টি সাউন্ড গ্রেনেড, ১৩টি স্ট্যান গ্রেনেড, ৬০ মাল্টি ইমপেক্ট গ্রেনেড, ও ১০০টি মাল্টিপল আউটপুট নয়েজ। যা জননিরাপত্তার জন্য মারাত্নক হুমকি এবং বিপজ্জনক।

সিএমপির তথ্যমতে, গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সল হাসানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যেসব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বেসামরিক জনগণকে দেওয়া হয়েছে সেগুলো স্থগিত ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে এসব অস্ত্র ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি এবং লাইসেন্স করা অস্ত্র যারা জমা দেননি এগুলো হুমকি হয়ে রয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে থাকা লাইসেন্স করা অস্ত্র বৈষম্যবিরোধি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে চসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. মোরশেদ আলমের অস্ত্রটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

একই অভিযোগ রয়েছে চসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলীর বিরুদ্ধেও। তার অস্ত্রটি ভূমি দখল ও ভোট ডাকাতির কাজেও ব্যবহৃত হতো। এই অস্ত্রের কারণে পুরো এলাকায় কাউন্সিলর মোবারক আলীর ভয়ে তটস্থ ছিলেন এলাকার লোকজন।

একইভাবে ছাত্র-জনতার উপর গুলি করার কাজে ব্যবহার হয়েছে চসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অস্ত্রটিও। যেটি ব্যবহার হয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর উপ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির কাজেও। এই অস্ত্রের গুলিতে পাহাড়তলি কলেজ ভোট কেন্দ্রে নিহত হয়েছেন এক ভোটার। এই অস্ত্রের লাইসেন্স কাউন্সিলর ওয়াসিমের নামে হলেও তা ব্যবহার করতো কাউছার নামে এক সন্ত্রাসী। রেলের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে এই অস্ত্র ব্যবহার করত কাউছার। যিনি নিজেকে ওমরগণি এমইএস কলেজের প্রাক্তণ ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি হত্যা মামলার আসামি হলেও হাটেন বুক ফুলিয়ে। তবে সরকার পতনের পর গা-ঢাকা দেন তিনি।

এ অবস্থায় কাউন্সিলর মোরশেদ ও মোবারক আলী নিজেদের অস্ত্র পাঁচলাইশ থানায় জমা দিলেও আলোচিত কাউন্সিলর ওয়াসিমের অস্ত্রটি এখনো জমা হয়নি কোন থানায়। জমা হয়নি কিশোর গ্যাং লিডার পাহারখেকো কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন জসিম, এসরারুল হক এসরারসহ একাধিক কাউন্সিলরের অস্ত্র। ফলে লাইসেন্স বাতিল হওয়া অবৈধ ও লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে চট্টগ্রামে অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ক্রাইম আব্দুল মান্নান মিয়া এ প্রসঙ্গ বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নগরীর বিভিন্ন থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের সময় বেশ কিছু অস্ত্র, গোলাবারুদ ও পুলিশের বিভিন্ন সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ৮টি থানায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। থানা ভবনগুলো পুড়ে যাওয়া ও কাজ করার পরিবেশ না থাকায় বেশ কিছু দিন থানার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিছু দিন পর আবারও থানাগুলোর কার্যক্রম শুরু হলে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ শুরু করে সিএমপি।

তিনি আরও বলেন, কোনো ফৌজদারি মামলা না করার শর্তে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই অস্ত্র ফেরত দিয়েছেন। আবার পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছে।

সিএমপির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দুষ্কৃতকারীদের হাতে থাকা অস্ত্রগুলো জননিরাপত্তার জন্য মারাত্নক হুমকি। সেগুলো উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। এসব অস্ত্র যাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঈশান/খম/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page