বৃহস্পতিবার- ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

চট্টগ্রামে ইসলামী আন্দোলনের বৈঠকে আলোচকদের বিরূপ মন্তব্য

চট্টগ্রামে ইসলামী আন্দোলনের বৈঠকে আলোচকদের বিরূপ মন্তব্য
print news
  • নির্বাচন নিয়ে অস্থির হওয়ার কিছু নেই : চরমোনাই পীর
  • এখনও ভারতের প্রেসক্রিপশনেই রাজনীতি চলছে : নগর জামায়াত আমির
  • চট্টগ্রাম নিয়ে অপচেষ্টা চলছে : সারজিস
  • ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ : রাসেল

 

ক্ষমতায় যেতে নির্বাচন নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছেন। করছেন ভারতের দালালিও। কিন্ত নির্বাচন নিয়ে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। এমন মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির (চরমোনাই পীর) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর পলোগ্রাউন্ড কনফারেন্স রুমে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, গণ-অধিকার পরিষদ, জাতীয় নাগরিক কমিটি, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ইসলামী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সব আলোচকেরা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে একই সুরে কথা বলেছেন।

বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যারাই শাসক ছিল তারা ভারতের দালালি করেছিল। এখন যারা ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করছে, তারাও ভারতের দালালি শুরু করে দিয়েছে। বাংলাদেশে ৫৩ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কেউ জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে পারেনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘দুঃখ হয়। যখনই খুনি, ফ্যাসিস্ট এবং দেশের টাকা লুটপাট ও পাচারকারীদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে, নির্বাচনে আসার ব্যাপারে আহ্বান করে এবং তাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে। যদি আমাদের দেশকে সুন্দর করতে হয় এবং স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চাই, তাহলে এসব চিন্তার পরিবর্তন করতে হবে।’

রাজনীতিতে স্বার্থের অগ্রাধিকার দেওয়ার মনোভাব পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ‘রাজনীতি মূলত ইসলাম, দেশ, মানবতা ও কল্যাণের জন্যে। আমরা ৫৩ বছর যেটি দেখেছি, অনেকে রাজনীতি এবং ক্ষমতার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থটা অগ্রাধিকার দিয়েছে বা পেয়েছে। এর পরিবর্তন আমাদের দরকার।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই ব্যানার এবং এই মার্কায় সংসদে একজন এমপিও যায়নি। আমাদের যাওয়ার মতো সুযোগ ছিল না? অবশ্যই ছিল। না যাওয়ার কারণ হল, আমরা রাজনীতি করি ইসলাম, দেশ, মানবতা ও কল্যাণের জন্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট আমি শাহবাগে বক্তব্যে বলেছিলাম ৫ আগস্ট গণভবন জনগণ দখল করবে কাকতালীয়ভাবে সেই ৫ আগস্ট দখল হয়েছে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলনের কথা বলে নাই; যে তারা কোথায় আছে, কী করছে। আজকে বাংলাদেশে এত পরিবর্তন হয়েছে, আমি প্রশ্ন করি—ইসলামী আন্দোলনের সাথে কি পরামর্শ করা হয়েছে?’

হুঁশিয়ারি দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের এ নেতা বলেন, ‘যেসমস্ত দলের মহাসচিব ঘোষণা দিয়েছেন, আন্দোলনের সাথে আমরা সম্পৃক্ত নই, তাদের হুকুম চলেছে। অথচ আমরা জীবনবাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম গুলির সামনে। ওনাদের কোনো খবর ছিল না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বৈষম্য এখান থেকেই শুরু হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনকে যদি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন গুরুত্ব না দেয়; তাহলে আমরা মুখ খুলতে বাধ্য হবো। ইসলামী আন্দোলন সবসময় সঠিক কথা বলে এসেছে।’

চট্টগ্রাম নগর জামায়াত আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘ভারতের সাথে বাংলাদেশের ১৭টি চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তিগুলো আমরা দেশের মানুষ জানি না। গত ১৮ বছরে ভারতের পক্ষ থেকে যে প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়েছে; সেই অনুসারে একটি দল রাজনীতি করেছে। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিল— ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ যা বলে তা বিদেশের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বক্তব্য রাখে। চাকরি দিছে কাউকে? না দেয়নি। আমরা দেখলাম ঘরে ঘরে মামলা, ঘরে ঘরে হামলা, পুলিশ, র‍্যাব। কিসের রাজনীতি আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম নিয়ে যে কয়েক আঙ্গিকে অপচেষ্টা চালানো যায়, সেগুলোর নমুনা আমরা দেখেছি। এই অপচেষ্টা দেখানো যেতে পারে সমুদ্রবন্দর কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার কয়েকভাবে করা যেতে পারে। একটা ভূমির দিক থেকে, আরেকটি বাঙালি এবং পাহাড়ি ভাই-বোনেরা রয়েছেন; তাদের মধ্যে বিভাজন উস্কে দিয়ে।’

‘আমাদের ভাই আলিফকে আমরা হারিয়েছি। ওই খুনি এবং ফ্যাসিস্টরা নীলনকশা করে হত্যার এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে চট্টগ্রাম নিরাপদ রাখতে পারলে বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখতে পারি।’-বলেন সারজিস।

সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘ভারতীয় নীলনকশায় বাংলাদেশের নির্বাচনগুলো হয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের তৌহিদী জনতা হেফাজতের নেতাকর্মীদের শাপলা চত্বরে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত বীজ বপন হয়েছে, অতীতে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। ভারতীয় এজেন্ডা যেভাবে ‘র এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে এবং তাদের যে এজেন্টগুলো আছে তাদের মূলউৎপাটন করতে হবে। এজন্য আমাদের সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন এবং সামাজিক সংগঠনকে একসাথে কাজ করতে হবে।’

‘আমরা যদি ভারতীয় আধিপত্যকে ঠেকাতে না পারি; তাহলে আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না। ভারত সবসময় তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করেছে। আমাদের পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে তারা এক্সেস নিয়েছে। বিনিময়ে আমরা কিছুই পাইনি। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা আমাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে চোখে চোখ রেখে, গিভ অ্যান্ড টেইকের।’-বলেন সমন্বয়ক রাসেল।

ইসলামী আন্দোলন চট্টগ্রাম নগর সভাপতি মুহাম্মাদ জান্নাতুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় বৈঠকে খেলাফত মজলিসের চট্টগ্রাম নগর সভাপতি অধ্যাপক খোরশেদ আলম, গণ-অধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইউসূফ, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ মাহাদী, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান, আশরাফ আলী আকন, হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম নগর সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম, নগর বিএনপির স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক এস এম সরোয়ার আলম, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিমুদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়