
চট্টগ্রামে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুছে সুন্নি জনতার ঢল নেমেছে। শেষ হয়েছে জুলুছের প্রধান আকর্ষণ শোভাযাত্রাও।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় মুরাদপুরের ষোলশহর আলমগীর খানকা-এ কাদেরিয়া ছৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে শুরু হয় জশনে জুলুছের শোভাযাত্রা। এতে নেতৃত্ব দেন আল্লামা ছৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবের শাহ। অতিথি হিসেবে আছেন শাহজাদা ছৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ। হামদ, নাত ও দরুদ পড়তে পড়তে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
জোহরের নামাজের পর জুলুছে অংশগ্রহণকারীরা জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন মাঠে গিয়ে জমায়েত হয়। সকাল থেকে সেখানে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের বিশিষ্ট আলেমরা রাসুলের জীবন দর্শনের ওপর ওয়াজ করছেন।
আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় এই জশনে জুলুছের আয়োজন করা হয়। এবারের আয়োজন ছিল ৫২তম। সংগঠনটির দাবি, বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়োজন এ জশনে জুলছ।
সংগঠনের দায়িত্বশীলরা জানান, সোমবার ফজরের নামাজের পর চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বাস, ট্রাক, জিপে করে আসা শুরু করেন সুন্নি জনতা। সুন্নিয়া মাদরাসা, বিবিরহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট জিএসসি মোড় এলাকা লোকে লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে। জশনে জুলুছে নেমেছে জনস্রোত।
চট্টগ্রামে জশনে জুলুছ ৫০ বছর আগে ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জশনে জুলুছ মিডিয়া কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার।
তিনি বলেন, ‘দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া ছিরিকোট শরীফের (পাকিস্তান) তৎকালীন সাজ্জাদানশীন, আধ্যাত্নিক সাধক, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.) এ জশনে জুলুছের প্রবর্তন করেন।
এবারের জুলুছে অর্ধকোটি মানুষ অংশ নিয়েছেন উল্লেখ করে আইনজীবী বখতিয়ার বলেন, জুলুছের মধ্য দিয়ে সবার কাছে শান্তির বার্তা বয়ে দেওয়া হয়। আমরা জঙ্গিবাদ বিরোধী। আমরা শান্তি-সমৃদ্ধির পক্ষের মানুষ। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষ।
আয়োজক সংগঠন আনজুমানের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘চট্টগ্রামের এই জুলুছ বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুলুছ। ‘আমরা বিশ্বাস করি এ জুলুছ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করবে। আমাদের স্বীকৃতি দিতেই হবে।
আনজুমানের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের (এএসএফ) ৩০০ প্রশিক্ষিত সদস্য এবার জুলুছের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে গাউসিয়া কমিটির কর্মী ও জামেয়ার হাজার হাজার ছাত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার তারেক আজিজ জানিয়েছেন, জশনে জুলুছে এক হাজারেরও বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও সক্রিয় আছেন সার্বিক নিরাপত্তায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নগরীর বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড় সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন।
এছাড়া পাঁচলাইশ, হামজারবাগ, শোলকবহর, মির্জারপুল রোডের মুখ, বায়েজিদ বোস্তামী রোডের মুখ (শেরশাহ মোড়), বেবি সুপার মার্কেট, প্রবর্তক মোড়ের মুখ, জাকির হোসেন রোডের মুখ, গোলপাহাড় রোডের মুখ ও পুনাক মোড়ে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন করা হয়েছে।