চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কবরস্থান নিয়েও চলছে বাবসা। সম্প্রতি পাঁচ মাসের এক শিশুকে কবর দিতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবির করা হয়েছে। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে পতেঙ্গা এলাকাজুড়ে। ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বইছে সমালোচনার ঝড়। তবে এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে টাকা ছাড়াই ওই শিশুকে শেষপর্যন্ত কবর দেওয়া হয়।
এর নেপথ্যে রয়েছেন মোতোয়াল্লীর নিয়োগপ্রাপ্ত দু‘ব্যক্তি। অভিযুক্ত দু‘জন হলেন— বাইতুর রহমত জামে মসজিদ প্রকাশ শেরে পতেঙ্গা মসজিদ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শামসুল আলম এবং ফরিদ ওরফে ফুরুক। তবে তাঁরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জানা যায়, সোমবার (২০ নভেম্বর) সকালে পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন মহিলা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন মো. শাহাদাৎ হোসেনের ৫ মাসের শিশু তাহিয়া আক্তার মারা যায়। ওই শিশুকে বাইতুর শেরে পতেঙ্গা মসজিদ সংলগ্ন এলাকার কবরস্থানে দাফন করতে গেলে মসজিদের ওয়াকফ স্টেটের মোতোয়াল্লির পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত শামসুল আলম মাটি ভাড়া বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা ছাড়া কবরস্থানে দাফন করা যাবে না বলেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন।
এদিকে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেন জোবায়ের বাসার নামে স্থানীয় এক যুবক। এরপর ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে দুপুর ৩টার দিকে টাকা ছাড়া ওই শিশুর লাশ দাফন করা হয়।
শিশুর চাচা মো. রাশেদ জানান, মৃত লোককে কবর দিতে টাকা চাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এলাকায় যেকেউ মারা গেলে তাকে দাফন করতে শামসুল আলম ও ফরিদ ওরফে ফুরুককে টাকা দিতে হয়। তবে টাকার পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, দেড় বছর আগে আমার বাবা আব্দুর রহিম সাওদাগর মারা গেলে তখনও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন শামসুল আলম ও ফরিদুল আলম। টাকা দিতে না চাইলে একপর্যায়ে তারা ১৫-২০ হাজার টাকা দাবি করেন। এরপরও অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের সঙ্গে আমার বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার পর তারা আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরে পতেঙ্গা মসজিদ জায়গাটি একটি ওয়াকফ স্টেটের মালিকানাধীন। সেখানে মোতোয়াল্লি হিসেবে আছেন শাহাজাহান বেগম নামের এক নারী। চার বছর আগে মোতোয়াল্লির পক্ষে মসজিদটি দেখাশোনার জন্য এলাকার শামুসল আলম ও ফরিদুল আলম ওরফে ফুরুককে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই থেকে এলাকার মৃত ব্যক্তিকে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে কবর দিতে গেলে তাদের দাবি করা টাকা দিতে হয়। অথচ এই কবরস্থান ওয়াকফ স্টেটের মালিকানাধীন নয়। এটি একই এলাকার মৃত আব্দুল হকের কেনা সম্পত্তি। তাদের পারিবারিক কবরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৃত মৃত আব্দুল হকের একমাত্র ছেলে শামিমুল হক রায়হান বলেন, শেরে পতেঙ্গা মসজিদের পাশের কবরস্থান আমাদের পারিবারিক কবরস্থান। আমার পিতা মৃত আব্দুল হক এলাকার গরিব মানুষদের বিনা টাকায় লাশ দাফন করতে এটি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। কাউকে দাফন করতে হলে আগের মসজিদ কমিটি আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। কিন্তু এখন যারা দায়িত্বে আছেন একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করেন না।
তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি শুনছি কবর দিতে গেলে মসজিদ ওয়াকফ স্টেটের পক্ষ থেকে শামুসল আলম ও ফরিদুল আলম ওরফে ফুরুক টাকা দাবি করছেন। তাদের টাকা না দিয়ে লাশ দাফন করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, শাহাদাৎ হোসেনের মৃত শিশুকে দাফন করতে টাকা চাওয়া হয়নি। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া যুবক তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। মূলত এটি ষড়যন্ত্র।
কবরস্থান ওয়াকফ স্টেটের নয় এবং মৃতদেহ দাফন করতে এক-দুই হাজার টাকা চাওয়া হয় জানিয়ে শামসুল আলম বলেন, টাকা মূলত কবরস্থানে মাটি ভরাট করতে চাওয়া হয়। কারও ইচ্ছা হলে টাকা দেয়, কেউ দেয় না। টাকা দিতে কাউকে বাধ্য করা হয় না।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মসজিদের মোতোয়াল্লি শাহজাহান বেগমের ছেলে মো. ইসলাম প্রকাশ টিটু বলেন, মোতোয়াল্লীর পক্ষে নিয়োগপ্রাপ্ত দুজনকে বেতন দেওয়া হয়। দাফন করতে টাকা চাওয়া একেবারেই অযৌক্তিক। তাছাড়া কবরস্থানটি ওয়াকফ স্টেটের মাধিকানাধীন নয়, এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। এ বিষয়ে শামসুল আলমকে জিজ্ঞাসা করা হবে।
কবরস্থানে লাশ দাফন করতে টাকা নেওয়ার বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুল বারেক বলেন, আজ একটি মৃত শিশুর দাফন করা নিয়ে অনেককিছু হয়েছে। এর আগেও টাকা চাওয়ার বিষয়ে আমি একবার ফুরুককে ফোনও করেছিলাম। এটি মহল্লার লোকজন সমধান করাতে আমি হস্তক্ষেপ করিনি।
ঈশান/খম/