
নাম শুনলেই মনে হয় নিশ্চিত মৃত্যু-এমন রোগের নাম ক্যান্সার। আর মরণব্যাধী এই ক্যান্সারের থাবা দেশজুড়ে। তম্মধ্যে একটু বেশি এগিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগ। এর মধ্যে এগিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা। মোট আক্রান্তের ৮১ শতাংশ ক্যান্সার রোগী শুধু এই দুই জেলায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি সংশ্লিষ্টদের হিসেবে, চট্টগ্রামে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখেরও বেশি। যদিও এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই বলে জানান চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ।
তিনি বলেন, গত বছর চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬০ হাজারেরও বেশি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯ হাজার ৯৬৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন চমেক হাসপাতালে। যেখানে ক্যান্সারে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ জন।
এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৩৩ জন ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে। এর মধ্যে ক্যান্সারে নতুন আক্রান্ত রোগী ছিল ৪ হাজার ৭৭২ জন। এছাড়া নগরীর শেভরণ, পার্কভিউ, এভারকেয়ার, ম্যাক্স ও পপুলার হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ক্যান্সার আক্রান্ত অনেক রোগী।
ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ :
চট্টগ্রাম অঞ্চলে ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ভেজাল খাদ্যগ্রহণ। এছাড়া তামাক সেবন, কাজিন ম্যারেজ বা নিকটাত্নীয়দের মধ্যে বিয়ের প্রবণতা অনেকটা দায়ী। সেই সঙ্গে সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকিতে ডিটিটির ব্যবহার, ঝাল তরকারি ও লাল মাংস ছড়িয়ে দিচ্ছে ক্যান্সারের বিষ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিক্যুলার বায়োলজির অধীনে পরিচালিত ল্যাবরেটরি অব ইউকারেউটিক জিন এক্সপ্রেশন অ্যান্ড ফাংশন এবং চিটাগাং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর চিল্ড্রেন সার্জারি (ক্রিকস) যৌথ সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সমীক্ষায় দেখা যায়, আক্রান্তদের প্রায় ১৫ শতাংশ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও সাতকানিয়া উপজেলায়। ১৩ শতাংশ পটিয়া উপজেলায়। ১৩ শতাংশ উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। বাকি ১১ উপজেলায় রয়েছে ১১ শতাংশ। আর কক্সবাজার জেলায় রয়েছে ৩১ শতাংশ।
সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি ৪০-৬০ বছর এবং ৫০-৬০ বছর এই দুই সময়ের মধ্যে। এই দুই বয়সসীমায় আক্রান্তের হার ২১ শতাংশ করে।
চিকিৎসকরা বলছেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় স্তন, জরায়ু, লিভার, ফুসফুস ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার রোগী বেশি। এসব এলাকার মানুষের মধ্যে এসব ক্যান্সার কেন বেশি হচ্ছে তা গবেষণার বিষয়।
চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. আলী আসগর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, মুখরোচক ঝালযুক্ত খাবার, ধুমপান, শুঁটকি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, স্বাস্থ্যের প্রতি অসেচতনতা, খাদ্যে রাসায়নিক পদার্থের সংযুক্ততা ইত্যাদিই মূলত এই অঞ্চলের লোকদের ক্যান্সার হওয়ার জন্য দায়ী। স্ক্রিনিংটা ভালোভাবে না হওয়ায় লোকজন এ রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ স¤পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছে না।
ডা. আলী আসগর বলেন, উপকূলের মানুষ সামুদ্রিক মাছ ও শুঁটকি বেশি খায়। সমুদ্রে রাসায়নিক বর্জ্য ফেলা হয়। এসব বিষাক্ত বর্জ্য সাগরের মাছের পেটে ঢোকে। এছাড়া শুঁটকি তৈরির সময় সারসহ একাধিক রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যত মানুষ ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে তার ৬০ ভাগ মারা যাচ্ছে তামাক থেকে। ধোঁয়াবিহীন তামাকও রয়েছে এর সাথে। তাই মানুষের মধ্যে সচেতনতা থাকতে হবে। সিগারেট, পান, জর্দা বর্জন করতে হবে।