
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আদনান শরীফ ওরফে আসিফ শরীফকে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জড়িত আসিফ শরীফ। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কিন্তু তার পরিবারের দাবি, আসিফ শরীফ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নয়। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সে দু‘য়েকদিন আন্দোলনে গিয়েছিল। সে ষড়যন্ত্রের শিকার। পুলিশ তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চবির সমন্বয়ক সুমাইয়া শিকদার নিশ্চিত করেছেন, আসিফ শরীফ (২২) চবির ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তিনি দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসার সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন।
আবার আসিফ শরীফ সমন্বয়ক নয় বলে দাবি করেছেন চবির সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের সমন্বয়ক টিম প্রকাশে কিছু ত্রুটি ছিল। তাই যোজন-বিয়োজন করার জন্য সমন্বয়ক টিম স্থগিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই নতুন টিম ঘোষণা করা হবে। তবে গ্রেপ্তার আসিফ শরীফ আমাদের সমন্বয়ক নন।
চবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ ন ম আব্দুল মাবুদ বলেন, আমার প্রথম বর্ষের চারজন ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভের মধ্যে আসিফ একজন। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। একজন হাফেজে কোরআনও। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতো। সে গত ১৫ জুলাই অসুস্থ ছিল। তার পায়ে ব্যাথা। ডাক্তার বলেছে, পায়ে ভর দিয়ে না হাঁটতে। অথচ তাকে ১৬ জুলাইয়ের গন্ডগোলের মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের মুখপাত্র এবং অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুরে সংঘটিত সহিংসতায় আসিফ শরীফের উপস্থিতি ছিল। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ শতভাগ নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তার পরিবার ভিন্ন কিছু দাবি করতেই পারে। আমরা এর আগে ওই ঘটনায় যাদেরকে গ্রেফতার করেছি তাদেরকেও ভিডিও ফুটেজটি দেখানো হয়েছে। তারাও আসিফকে শনাক্ত করেছে।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, গত ১৬ জুলাই মুরাদপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটনাস্থলে থাকা ভিডিও ফুটেজ দেখে আদনান শরীফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় করা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে।
ওসি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দারুল উলুম মাদ্রাসার সমন্বয়ক আসিফ। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে সহিংসতার ঘটনায় আসিফ শরীফকে গত বুধবার (৩১ জুলাই) রাতে নগরীর বাকলিয়া থানাধীন ডিসি রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সহিংসতার ভিডিও ফুটেজ দেখে আসিফকে শনাক্ত করেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আসিফ শরীফের পরিবারের দাবি, যে ভিডিও ফুটেজ দেখানো হচ্ছে তাতে আসিফের উপস্থিতি নেই। ঘটনার সময় অসুস্থ থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় বিশ্রামে ছিলেন। আসিফ শরীফকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমন দাবি করেন তার ছোট ভাই নাফিজ শরীফ। তিনি বলেন, আমার ভাই ১৫ জুলাই ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। যার প্রেসক্রিপশন আছে আমাদের কাছে। তাকে ডাক্তার ৭ দিনের বেড রেস্ট দিয়েছেন। পুলিশ যেদিনের ঘটনায় অভিযোগ এনে তাকে চালান দিয়েছে সেদিন আসিফ ঘরে শুয়েই বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করছিলেন। তিনি সেদিন বের হননি।
পুলিশ ওই দিনের সহিংসতার ঘটনার ভিডিও ফুটেজে আসিফের সম্পৃক্ততা দেখেছে বলে দাবি প্রসঙ্গে নাফিজ বলেন, পুলিশ যে ভিডিওটায় আমার ভাইয়ের উপস্থিতি আছে দাবি করেছে; সেটি যদি আমার ভাই হয় তাইলে আমি নিজেই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াব। আমার ভাই সমন্বয়কের দায়িত্বে নেই। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবেই দু‘য়েকদিন আন্দোলনে গিয়েছিল।
এদিকে গ্রেপ্তার আসিফ শরীফের মা হোসনে আরা বলেন, বুধবার রাতে পুলিশের একটি টিম বাসা থেকে আসিফকে থানায় নিয়ে যায়। আমার ছেলে অত্যন্ত মেধাবী। কোনও খারাপ কাজে তার সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি আমার ছেলে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যুক্ত নয়।
তিনি আরও বলেন, যে ভিডিও ফুটেজ দেখে আসিফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই ফুটেজের ব্যক্তি আসিফ নয়; সেটা অন্য কেউ। আমার ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার ছেলে অসুস্থ এরপরও পুলিশ তাকে ছাড়েনি।