বৃহস্পতিবার- ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

চট্টগ্রামে ছাড়ের আসনে জাপার প্রার্থী নিয়ে হাসি-ঠাট্টা

স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা

চট্টগ্রামে ছাড়ের আসনে জাপার প্রার্থী নিয়ে হাসি-ঠাট্টা
print news

নেতাকর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, মার্কেটের দারোয়ান হওয়ার যোগ্যতা নেই জাপার এমন নেতাকে মার্কেটের মালিক দেখে আওয়ামী লীগের নিষ্ঠাবান প্রার্থীকে বাদ দিয়ে সমঝোতার আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। যার ফল পাবে নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ২ লাখ ভোট পেলে জাপার ওই প্রার্থী ভোট পাবেন ১০ হাজারেরও কম। এমন গো হারা হারবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে (জাপা) দুটি আসন ছেড়ে দিয়ে দলীয় প্রার্থীকে সরিয়ে নিয়েছে। আসন গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-৫ আসনে প্রার্থী হয়েছেন জাপার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রার্থী হয়েছেন সোলায়মান আলম শেঠ।

কিন্তু এই দুই প্রার্থীকে পড়তে হচ্ছে হাসি-ঠাট্টার মধ্যে। কারণ এই দুই আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কেউ নেই এই দুই প্রার্থীর পক্ষে। নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই কাজ করছেন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণা যেভাবে জমে উঠেছে, তাতে জাপার দুই প্রার্থীর প্রচারণা একরকম নিস্তেজ।

নেতাকর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, মার্কেটের দারোয়ান হওয়ার যোগ্যতা নেই জাপার এমন নেতাকে মার্কেটের মালিক দেখে আওয়ামী লীগের নিষ্ঠাবান প্রার্থীকে বাদ দিয়ে সমঝোতার আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। যার ফল পাবে নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ২ লাখ ভোট পেলে জাপার ওই প্রার্থী ভোট পাবেন ১০ হাজারেরও কম। এমন গো হারা হারবে।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

নেতাকর্মীরা জানান, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠকে সমর্থন দিয়ে সেখানে বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা সোলায়মান আলম শেঠকে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের ভোটাররা সহজে মেনে নিতে পারছেন না। সোলায়মান আলম শেঠ এমনকি ওই এলাকার ভোটারও নন। তাছাড়া তিনি এর আগে খাগড়াছড়ি আসনে একাধিকবার প্রার্থী হয়েও শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নোমান আল মাহমুদকে সরিয়ে নেওয়া হলেও সোলায়মান আলম শেঠকে লড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কিষাণ চৌধুরীর সঙ্গে। সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের এলাকায় তুলনামূলক ভালো অবস্থান রয়েছে। অন্যদিকে সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কিষাণ চৌধুরীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও বর্তমান সাংসদ নোমান আল মাহমুদ।

এ বিষয়ে জানতে জাতীয় পার্টির নেতা সোলায়মান আলম শেঠকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। সাক্ষাতে কথা বলতে নগরীর চকবাজার এলাকায় নিজস্ব অফিসে গেলেও ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি আরেকদিন আসার কথা বলেন।

তবে এ বিষয়ে কৌশলী জবাব দিয়ে বোয়ালখালীর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, অনেকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলেও আমরা এখনও কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। কেন্দ্রের নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। জাতীয় পার্টিকে যেহেতু দল সমর্থন দিয়েছে, সে হিসেবে আমাদের তার পক্ষে কাজ করতে হবে। দু-একদিনের মধ্যে নাঙ্গলের প্রচারণায় সবাই মাঠে নামবো।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

এদিকে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকেও সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

কিন্তু নির্বাচনী মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পাচ্ছেন না ব্যারিস্টার আনিস। নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে তার সঙ্গে কেবল আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস গণি চৌধুরী, সৈয়দ মনজুরুল আলম ও পরিবহন নেতা মঞ্জুরুল আলম ম›জু ছাড়া তেমন আর কাউকে তার সঙ্গে দেখা যাচ্ছেনা। এই আসনে দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামকে আর মাঠে দেখা যায়নি।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এক-তৃতীয়াংশ নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন। বাকিদের বেশিরভাগই পালন করছেন নীরব ভূমিকা। নেতাকর্মীদের অনেকে আক্ষেপ করে বলেছেন, ১৫ বছর দল ক্ষমতায় থাকলেও এই আসনে কখনোই দলীয় এমপি পাননি তারা।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

ভোটের মাঠে এসব হিসাবের কারণে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে কঠিন লড়াইয়েই নামতে হচ্ছে। ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের ব্যক্তিগত সহকারী সৈয়দ মনজুরুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছেন। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা নির্দেশনা অমান্য করতে পারে না। আমরা ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আমাদের সাথে আছেন। হাতেগোনা কয়েকজন হয়তো বিরোধিতা করছেন। সময় হলে তারাও ফিরে আসবেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৯৭৩ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত হাটহাজারীতে আমরা দলীয় এমপি পাইনি। সে হিসেবে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মনে ব্যথা রয়েছে। শাহজাহান ভাই দলীয় লোক হিসেবে অনেকে তার পক্ষে কাজ করছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীকেও দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যে যার ইচ্ছেমত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এর আগেও আমি এ আসনের তিন বারের নির্বাচিত এমপি ছিলাম। হাটহাজারীর জনগণ আমাকে আবারও এমপি নির্বাচিত করবেন। আওয়ামী লীগের কিছু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এটা স্বাভাবিক। আমার পক্ষে নেই এটাও ঠিক নয়। দেখবেন সবাই মিলে আমাকেই এমপি নির্বাচিত করবেন।

ঈশান/মখ/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show