Skip to content

রবিবার- ১ জুন, ২০২৫

চট্টগ্রামে ছিনতাই-ডাকাতির অন্তরালে বড় সিন্ডিকেট!

চট্টগ্রামে ছিনতাই-ডাকাতির অন্তরালে বড় সিন্ডিকেট!

ট্টগ্রামে ছিনতাই-ডাকাতির অন্তরালে রয়েছে বড় সিন্ডিকেট। এই চক্রের তিন মূল হোতা এখন পুলিশের কব্জায়। এরা হলো-মেহেদি হাসান আরিফ, মনির ও পিচ্চি জাহিদ।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপৃল) দুপুরে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া।

তিনি বলেন, চক্রের অন্যতম হোতা মেহেদি হাসান আরিফ ওরফে পলাশকে পুলিশ বুধবার দুপুরে ডবলমুরিং থানার বারিক বিল্ডিং এলাকার আস্তানা থেকে পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে। এ সময় পুলিশ সেখান থেকে একটি টিপ ছোরা, চায়নিজ কুড়াল, দুটি ছুরি, একটি করে গামছা, বালিশ ও চারটি লোহার রড জব্দ করে। উদ্ধার করা হয় ৫০ রাউন্ড কার্তুজও।

এর আগে বারিক বিল্ডিং এলাকায় ডাকাতির টাকা ভাগাভাগির খবর পেয়ে সম্প্রতি অভিযানে যাওয়া দুই পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত মনির ও পিচ্চি জাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রের আদ্যোপান্ত জানতে পারে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে নগরীর ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডে ডাকাতি, আগ্রাবাদের ক্যাট নামক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি ও পাঁচলাইশের একটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনাতেও তারা জড়িত। এই সিন্ডিকেটে ১০ জনেরও অধিক ডাকাত রয়েছে। যাদের মূল আস্তানা নগরীর ডবলমুরিং থানার বারিক বিল্ডিং এলাকায়। যেখান থেকে ডাকাতি চালায় গোটা নগরজুড়ে। এসব ডাকাতের প্রত্যেকের নামেই আছে ডজন ডজন ডাকাতির মামলা।

মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া বলেন, গত ১ এপৃল দিনগত রাত ৩টা থেকে ৪টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার সুগন্ধা এলাকার একটি বাসা থেকে ৪০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৭ লাখ টাকা ও ৫ হাজার ইউএস ডলার সংঘবদ্ধ চক্র নিয়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে আমরা এই চক্রকে শনাক্ত করার চেষ্টা করি।

একপর্যায়ে দেখা যায়, শ্রাবণ নামে এই চক্রের এক সদস্য প্রাইভেটকারে করে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে চক্রটি রামগড় দিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এসে চলে যায় কর্ণফুলী উপজেলা এলাকায়। সেখানে সার্কেল এসপির নেতৃত্বে আমরা টিম পাঠাই।

সেখানে চক্রের অন্যতম হোতা মেহেদি হাসান আরিফের মা ও বাবাকে পাওয়া যায়। এরমধ্যেই তারা আমাদের পরিকল্পনা টের পেয়ে যায়। মেহেদির বাবা হাত দিয়ে ইশারা করে তাদের পালানোর জন্য। ওখান থেকে মেহেদি, মনির ও জাহিদ পালিয়ে যায়। তাদের সহযোগীদের মধ্য থেকে রিয়াদ হোসেন বাচ্চু, জয়নাল আবেদিন, জসিম উদ্দিন, তৌহিদ রাকিব, বাদশা মিয়াকে আমরা গ্রেপ্তার করি।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে জানা যায়, তাদের মূলহোতা ডাকাত মেহেদি ও মনির। তারা চট্টগ্রাম শহরে বড় বড় কমার্শিয়াল হাবে ডাকাতি করে যাচ্ছে। তাদের সাথে আরও আছে পিচ্চি জাহিদ। সিএমপিতেই যার বিরুদ্ধে ৪০ থেকে ৪২টি মামলা আছে। মেহেদির বিরুদ্ধে আছে পঞ্চাশটিরও বেশি মামলা। এসব মামলায় তারা কারাগারে ছিল।

উপ-কমিশনার (পশ্চিম) হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া বলেন, মাস দুয়েক আগে বারিক বিল্ডিং মোড়ে অভিযান চালানোর সময় আমাদের দু‘জন পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় মেহেদি. মনির ও পিচ্চি জাহিদ। এই চক্রের সাথে ছিল রাতুল, হানিফ, নুরুন্নবি, শ্রাবণ ও বদর। সেখান থেকে আমরা দু‘জনকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। ডাকাতির টাকা সেখানে বসে ভাগ করছিল তারা। সম্প্রতি জামিনে বের হয়ে চক্রটি দল ভারি করে আরও বড় ডাকাতি শুরু করে।

মেহেদির কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি ৫ আগস্ট থানা থেকে লুটের অস্ত্র জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূইয়া বলেন, আমরা তার কাছ থেকে যে অস্ত্রটি উদ্ধার করেছি সেটি ডবলমুরিং থানায় বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের জমা রাখা একটি অস্ত্র। সেটি ইতালির তৈরি ৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম। থানা থেকে গত ৫ আগস্ট লুট হয়েছিল। কার্তুজগুলোও থানা থেকে লুট করা। এই চক্রটি ৫ আগস্টের আগেও ছিল। তাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। যাদের আমরা এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছি; তারা ৯০ শতাংশই চট্টগ্রামের বাইরের।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মেহেদি-মনির ও জাহিদের ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। ওরা বড় বড় ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো টার্গেট করে। তাদের দেহ খুবই স্লিম। তারা রড কেটে ঢুকে যায়। বিভিন্ন জায়গায় এমন কর্মকান্ডের বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপও আমরা পেয়েছি। তাদের টার্গেটই থাকে বড় বড় ডাকাতি। অন্য কোনো পেশায় এরা জড়িত না। তবে মেহেদি অটোরিকশা চালায়।

ডবলমুরিং থানার ওসি কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, মেহেদিকে আমরা আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইবো। সেইসাথে আরও অন্যান্য যে মামলা আছে, বিশেষ করে ওয়ান ব্যাংকের ডাকাতি, আগ্রাবাদস্থ ক্যাট প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি, পাঁচলাইশে ডাকাতি; এসব লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার অভিযান চালাবো।

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বারিক বিল্ডিং এলাকায় ছিনতাইকারীদের আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে আহত হন ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আহলাত ইবনে জামিল ও মো. নজরুল ইসলাম। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় মো. তারেক, মো. জুয়েল ও জাহেদুল ইসলাম নামের তিন ডাকাত।

পুলিশ তখন জানিয়েছিল, বারিক বিল্ডিং মোড়ে একটি টিনশেড ঘরে ডাকাতির টাকা ভাগাভাগির জেরে তাদের মধ্যে হাতাহাতি চলছিল। থানার দুই এসআই ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটকের চেষ্টা করেন। ওই সময় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করেন ডাকাতরা। অভিযানে তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা গেলেও ঘটনার মূলহোতা মেহেদিসহ কয়েকজন পালিয়ে যান। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page