চট্টগ্রাম কারাগারের সাবেক জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স¤পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার তদন্তে কোন গতি নেই। ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এ মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদ।
এরপর এখনো শেষ হয়নি এ মামলার তদন্ত। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানান দুদক চট্টগ্রাম-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত। তিনি বলেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
দুদক সূত্র জানায়, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স¤পদ অর্জনের অভিযোগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। একই মামলায় দুদকের দাখিলকৃত স¤পদ বিবরণীতে তার বিরুদ্ধে ৪০ লাখ ২৭ হাজার ২৩৩ টাকার স¤পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
সূত্র আরও জানায়, ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকে স¤পদের বিবরণী জমা দেন সোহেল রানা। দাখিলকৃত স¤পদ বিবরণীতে ৪০ লাখ ২৭ হাজার ২৩৩ টাকা স¤পদের তথ্য গোপন এবং ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স¤পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। ফলে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, স¤পদ বিবরণীতে ৬৮ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭৫ টাকার স্থাবর স¤পদ এবং এক কোটি ৯৭ লাখ ৭৪ হাজার ১৮ টাকার অস্থাবর স¤পদসহ দুই কোটি ৬৬ লাখ ৪২ হাজার ৮৯৩ টাকার স¤পদের মালিকানা দাবি করেন সোহেল রানা। তবে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার স¤পদ আরও বেশি।
বাবা জিন্নাত আলী বিশ্বাস ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়ায় ১.৬৯ একর জমি ৩২ লাখ টাকা মূল্যে সোহেল রানাকে হেবা হিসেবে দলিল করে দেন। তবে সোহেল রানার ভাইবোন জীবিত থাকা সত্ত্বেও সমমানের জমি কিংবা অর্থ তাদের দেননি জিন্নাত আলী। ফলে শুধুমাত্র সোহেল রানাকে হেবা দেওয়ার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকৃতপক্ষে নিজের অবৈধ অর্থ দিয়ে বাবার নামে স¤পত্তি কিনে পুনরায় বাবার কাছ থেকে হেবা হিসেবে দলিল করে নিয়েছেন। স¤পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর স¤পদ মিলে ৪০ লাখ ২৭ হাজার ২৩৩ টাকার তথ্য গোপন করেন সোহেল।
এ ছাড়া বৈধ আয়ের উৎসের চেয়ে অর্জিত স¤পদের পরিমাণ দুই কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫ টাকা বেশি পাওয়া যায় তার। ওই স¤পদ জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। আসলে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে সোহেল রানা এসব স¤পদ অর্জন করেছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের তখনকার জেলার সোহেল রানাকে ময়মনসিংহগামী ট্রেন থেকে নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর (স্থায়ী আমানত), ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার নগদ চেক, ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করে রেলওয়ে পুলিশ। তিনি চট্টগ্রাম থেকে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এত টাকাসহ গ্রেফতারের বিষয় নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হলে তদন্ত কমিটি গঠন করে কারা কর্তৃপক্ষ। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সোহেল রানার অবৈধ স¤পদ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
পাশাপাশি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে ভৈরব রেলওয়ে থানার এসআই মো. আশ্রাফ উদ্দিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। পরে সোহেল রানাকে বরখাস্ত করে কারা কর্তৃপক্ষ। গ্রেফতারের পর থেকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে আছেন তিনি।
চট্টগ্রাম কারাগারের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন সোহেল রানা। অভিযোগ আছে, এই সময়ে চট্টগ্রাম কারাগারকে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন তিনি। বন্দি বেচাকেনা, জামিন বাণিজ্য, সাক্ষাৎ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।