মঙ্গলবার- ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

চট্টগ্রামে পুকুর ও নলকুপের পানিতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া

print news

চট্টগ্রামে পুকুর ও নলকুপের পানিতে মিলেছে ক্ষতিকর কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া ও কলেরার জীবাণু। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর এক পরীক্ষা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।

শনিবার (১০ জুন) সকালে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্য জানান। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর, মোহরা, পাহাড়তলীসহ কয়েকটি এলাকা এবং পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ফলে গত ৫ মে আইইডিসিআরকে বিষয়টি তদন্তের জন্য চিঠি দেওয়া হয়।

এর প্রেক্ষিতে সংস্থাটির ১২ সদস্যের একটি দল চট্টগ্রামে এসে মহানগরীর মোহরা, পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলায় সরেজমিনে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এরমধ্যে বোয়ালখালী উপজেলার পৌর সদর এলাকার পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়নের পাঁচটি পুকুর এবং ৩টি টিউবওয়েলের পানির নমুনা সংগ্রহ করেন। যা পরবর্তীতে আইইডিসিআর এর নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।

গত বৃহ¯পতিবার পরীক্ষার এই প্রতিবেদন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়। আইইডিসিআর এর পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচটি পুকুরের মধ্যে পাঁচটিতেই মানবদেহের ক্ষতিকারক কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া এবং কলেরার জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়া তিনটি টিউবওয়েলের মধ্যে দুটিতে কলিফর্ম এবং একটিতে কলেরার জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যে উল্লেখ করা হয়, কলিফর্ম সনাক্ত এই ইঙ্গিত হতে পারে যে, দূষিত পানীয় জল সালমোনেলা প্রজাতির, শিগেলা, ই কোলাই এবং অনেক অন্যান্য প্যাথোজেনের। যে তীব্র আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েড ফিভার এবং আরও অনেক কিছু করার পরিপাক নালীর এর হালকা রোগ থেকে পরিসীমা সঙ্গে দেখা দিতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করা হবে। এরপর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও মোহরা, সমশের পাড়া, ফরিদের পাড়া, হালিশহর, পাহাড়তলী, বায়েজীদ, বাকলিয়া এবং জেলার সবকটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ সংসারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে এখনো ব্যবহার করছে পুকুরের পানি।

এমনকি নলকুপের সংকটের কারণে বা শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে নলকুপে পানি না উঠলে পুকুরের পানি না ফুটিয়ে ছেঁকে পান করছে। যাদের বেশিরভাগই প্রায়ই ডায়রিয়া-কলেরাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে সারাবছর। এ সমস্যা থেকে বাচতে হলে পুকুর বা নলকুপের পানি অবশ্যই ফুটিয়ে খাওয়ার বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

এদিকে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া স¤পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এ ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন আন্ত্রিক ভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা তৈরি করে। কলিফর্ম মিশ্রিত পানি পানে ডায়রিয়া, আমাশয়, রক্ত আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েড ছাড়াও ভাইরাল হেপাটাইটিস (জন্ডিস) রোগ হয়ে থাকে। তাই পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেলে সেই পানি কোনভাবেই পান করা যাবে না। বিশুদ্ধ করে পানি পান করতে হবে। না হয় নানান ক্ষতিরমুখে পড়তে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলিফর্ম একটি ভয়ংকর ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়া মিশ্রিত পানির কারণে মানুষের খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে থাকে। তাই পুকুরের পানি পান করার আগে অবশ্যই অবশ্যই বিশুদ্ধকরণ বা ফুটিয়ে পান করতে হবে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

পুকুরের পানি পান ও নলকুপ সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস বলেন, চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে। এ সংকট নিরসনে নলকুপ বসানোর মতো সুযোগ এখনো তৈরী হয়নি। এসব এলাকার মানুষ এখনো পুকুরের পানি সরাসরি বা ছেঁকে পান করে। ফলে একটা সময় তারা ডায়রিয়া, কলেরাসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়।

তিনি বলেন, এ তো গ্রামাঞ্চলের কথা। চট্টগ্রাম শহরেও এমন এলাকা রয়েছে যেগুলো একেকটি এলাকা যেন এক খন্ড গ্রাম। এসব এলাকার মানুষও পুকুরের পানি পান করে। তাছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতেও অনেক সময় বিভিন্ন জীবাণু থাকার কথা শুনা যায়। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের জনস্বাস্থ্য এখনো নিরাপদ বলা চলে না। তবে আমরা নিরাপদ পানি পানে সচেতনাতা মূলক কর্মসূচি পরিচালনা করি। সুযোগ হলে নলকুপ স্থাপনের উদ্যোগ নিই। এক্ষেত্রে জনবল সংকটের কারণে কাঙ্খিত সফলতা মিলছে না বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

No more posts to show