বৃহস্পতিবার- ২৭ মার্চ, ২০২৫

চট্টগ্রামে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে অর্ধলাখ ব্যবসায়ী

অধিকাংশই হোটেল-রেষ্টুরেন্ট ও বিপনি বিতানের ব্যবসায়ী

print news

ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে চট্টগ্রামের অর্ধলাখ ব্যবসায়ী। যাদের অধিকাংশই হোটেল-রেষ্টুরেন্ট ও বিপনি বিতানের ব্যবসায়ী। এ থেকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় ৮১৯ কোটি টাকা। অডিট করে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি বের করা হয়েছে। করা হয়েছে মামলাও।

ভ্যাটের টাকা আদায়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের। চট্টগ্রাম কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার তফসির উদ্দিন ভূঁইয়া মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, চট্টগ্রামে ভ্যাট দিতে সক্ষম এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এর মধ্যে নিবন্ধনের মাধ্যমে ভ্যাট দেন মাত্র ৪৭ হাজার ৫০০ ব্যবসায়ী। ভ্যাটের আওতার বাইরে রয়ে গেছেন অর্ধলক্ষাধিক ব্যবসায়ী। এদের অধিকাংশই হোটেল-রেষ্টুরেন্ট ও বিপনি বিতানের ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও সরকারের ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দেয়, তাদের বিরুদ্ধে অডিট করে ফাঁকির বিষয়টি বের করা হয়। করা হয় মামলাও। সার্কেল অফিসগুলো প্রিভেন্টিভ কমিটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদন্ত চালায়। এরপরও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেন ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আসে। প্রায় ৫০ শতাংশ ভ্যাট আসে জ্বালানি তেল সংক্রান্ত কো¤পানিগুলো থেকে। এছাড়া উৎস কর্তনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ভ্যাট সার্কেলে রাজস্ব আসে। চট্টগ্রামে ভ্যাটের নিয়মিত জরিপ চলছে। বিশেষ করে ইএফডি যন্ত্র বসানোর জন্য নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে ভ্যাট অফিস।

তিনি আরও বলেন, এক সময় চট্টগ্রামে কনস্ট্রাকশন কো¤পানিগুলোর প্রতিষ্ঠান বেশি ছিল। সেগুলো আলাদা আলাদা ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছিল। এখন অটোমেশন হওয়ায় এক নিবন্ধনে সব প্রতিষ্ঠান চলে আসছে। এ কারণে আমাদের মোট ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে আসছে। তবে এটা আরও বাড়ানো উচিত। চট্টগ্রামে আগের মূসক আইনে ভ্যাটের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ছিল প্রায় ৯০ হাজার।

চট্টগ্রাম কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ৮১৯ কোটি টাকা নিরঙ্কুশ ভ্যাট পাওনা রয়েছে। চট্টগ্রামের ১৪২টি প্রতিষ্ঠান সরকারের পাওনা এসব টাকা দিচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। এরমধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বকেয়ার পরিমাণ ৬২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বকেয়া ছিল ৬৪৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে বকেয়ার পরিমাণ ১৬২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে এ টাকা আদায়ের জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

সূত্র মতে, চট্টগ্রামে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর- এই পাঁচ মাসে ৫ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাসে গড়ে এক হাজার কোটি টাকা আদায় হলেও সামনের কয়েক মাসে তা স্থবির হয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। দেশের অবরোধ-হরতালের মধ্যে ভ্যাটে ভাটা পড়েছে। প্রবৃদ্ধির ধারাটা বজায় না থাকার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদেরও।

চট্টগ্রামের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভ্যাট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আদায় হয়েছিল ১০ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভ্যাট প্রবৃদ্ধির ওপর একটি বড় প্রভাব পড়তে পারে। কারণ সরকারের শেষ পর্যায়, নির্বাচন ও প্রধান ভ্যাটদাতা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের আওয়াতাধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি সংস্কারকাজের জন্য বন্ধ থাকবে বলে আগাম বার্তা দিয়েছেন।

চট্টগ্রামে ২০২০-২১ অর্থবছরে ভ্যাট রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৯ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা ভ্যাট রাজস্ব আদায় হয়েছিল।

চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ, ভ্যাট কমিশনারেটের তথ্যমতে, আগে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ভ্যাট প্রদানকারীর সংখ্যা ছিল ৯০ হাজার। ২০২২ সাল থেকে বাজেটে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের কেন্দ্রীয় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানের এক বা একাধিক জায়গায় উৎপাদন থাকবে, তাদের কেন্দ্রীয় নিবন্ধন নিতে হবে। ভ্যাট আইনে বর্তমানে ক¤িপউটারাইজড অটোমেটেড পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষণের শর্তে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন করার বিধান রাখা হয়েছে।

ঈশান/মখ/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page