
২০২৪ সনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগরের ব্যস্ততম কালুরঘাট-শাহ আমানত বিমান বন্দর সড়কের মুরাদপুর এলাকায় চরম নৈরাজ্য চালিয়েছে পরীক্ষার্থীরা।
এইচএসসি ২০২৪ইং ব্যাচের নামে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফটকের সামনে সড়কে জমায়েত সৃষ্টি করে মানববন্ধন করে অর্ধশত পরীক্ষার্থী। তবে সেখান থেকে পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দেয়।
এরপর পরীক্ষার্থীরা সড়কে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এ সময় সড়কে বড় ধরণের যানজট সৃষ্টি হয়। যানবাহনগুলো এক পাশ দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করলেও পরীক্ষার্থীরা সেগুলোকে আটকে দেয়। এ সময় পরীক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে যানবাহন চালকদের মারধর করতেও তেড়ে আসেন।
এমনকি গাড়ি ভাঙচুর করারও হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে শত শত যানবাহন চালক মিছিলের পাশ দিয়ে চলাচল করার সাহস পায়নি। এমন তথ্য জানান ভুক্তভোগী যানবাহন চালকরা।
চট্টমেট্টো ট-১৩-১৭৫৪ নং সিএনজি অটোরিক্সার চালক আমিনুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বলা নাই, কওয়া নাই, হঠাৎ সড়কে মানববন্ধন করে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করে পরীক্ষার্থীরা। এতে অনেকগুলো যানবাহন আটকে যায় ব্যস্ততম এই সড়কে।
তিনি বলেন, আমি একজন বিদেশগামী লোককে নিয়ে বিমান বন্দরের দিকে যাচ্ছিলাম। মানববন্ধনের কারণে পথে আটকে গিয়ে মুরাদপুর এলাকায় দুই ঘন্টা সময় নষ্ট হয়। এতে বিদেশগামী প্রবাসীর বিমান ধরা সম্ভব হয়নি। সিএনজি অটোরিক্সায় বসে পরীক্ষার্থীদের অনেক অনুনয়-বিনয় করার পরও তারা ছাড়েনি। বরং উল্টো মারতে তেড়ে আসেন পরীক্ষার্থীরা। শেষ পর্যন্ত ওই প্রবাসী রাস্তায় নেমে অনেক কান্নাকাটি করেছে।
মোটরসাইকেল চালক আরিফুল ইসলাম বলেন, মানববন্ধনে প্রায় এক ঘন্টা আটকে থাকার পর বিক্ষোভ মিছিলের সময় সড়কের এক পাশ দিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম। এ সময় পরীক্ষার্থীরা আমাকে লাথি মেরে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয়। এ সময় কয়েকজন নিজেদের ছাত্রলীগ নেতা বলেও পরিচয় দেয়।
একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সড়কের ৪ নং বাসের কয়েকজন যাত্রী। তারা বলেন, সারাবছর ছাত্রলীগ করেছে। লেখাপড়ার ধারে-কাছে ছিল না। এখন সড়কে আসছে পরীক্ষা পেছানোর দাবি নিয়ে। এদের কি মা-বাবা আছে, না নাই তাও বুঝি না।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ থানার এসআই মনির হোসেন। তিনি বলেন, পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে শিক্ষার্থীরা সকালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড অবরুদ্ধ করতে চেযেছিল। সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর তারা শিক্ষাবোর্ডের ফটকের সামনে সড়কের মোড়ে অবস্থান নেয়। এতে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। ফলে পুলিশ পরীক্ষার্থীদের সেখান থেকেও সরিয়ে দেয়।
এরপর তারা সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে যানবাহনগুলো প্রায় দুইঘন্টা ধরে চলাচল করতে পারেনি। এ সময় পরীক্ষার্থীরা অনেক যানবাহন চালকের সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছে। গাড়ি ভাঙতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত ভাঙনি। পুলিশ না থাকলে হয়তো ভাঙচুর করতো। ভাঙলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, পরীক্ষার্থীরা শুরুতে শিক্ষাবোর্ডের ভেতরে প্রবেশ করতে চেয়েছিল। পুলিশের হস্তক্ষেপের কারণে পারেনি। তারা কোনরকম বিশৃঙ্খলাও করতে পারেনি। পরে সড়কে কি করেছে তা আমার জানা নেই। পরীক্ষার্থীদের দাবির মুখে পরীক্ষার তারিখ পেছানো কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
ঈশান/খম/সুপ