মঙ্গলবার- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

চট্টগ্রামে মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজ-রসুনের দাম বেড়েছে চারগুণ!

print news

গত রোজার শুরুতে চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে দেশি পেঁয়াজ বিক্রয় হয়েছিল প্রতিকেজি ১৮ থেকে ২২ টাকায়। আর রসুন বিক্রয় হয়েছিল কেজিপ্রতি ৮০-১০০ টাকায়। সেই পেঁয়াজ শুক্রবার (১৯ মে) একই বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। আর রসুন বিক্রয় হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা দরে।

মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ ও রসুনের দাম প্রায় তিন থেকে চারগুণ বেড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এই তথ্য মিলেছে। টিসিবির তথ্য মতে, শুক্রবার চট্টগ্রামের সবকটি খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি চাষের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। যা রোজার শুরুতেও প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ২৫-২৮ টাকায়।

আর খুচরা বাজারে রসুন প্রতিকেজি বিক্রয় হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। যা রোজার শুরুতে প্রতিকেজি বিক্রয় হয়েছিল মাত্র ৮০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ টিসিবি মতে এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বেড়েছে প্রায় তিন থেকে চারগুণ। অন্যদিকে গত বছর একই সময়ে বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। আর রসুনের দাম ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এই দুই পণ্যের দর বেড়েছে দিগুণ।

এবার পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বৃদ্ধির কারণ কি জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের একাধিক আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকার কারণে বাজারে পেঁয়াজ সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আর বুকিং রেট বেশি হওয়ায় বেড়েছে রসুনের দামও।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

পেঁয়াজ ও রসুনের এই দাম বৃদ্ধি একেবারে অকল্পনীয় ও বিস্মিয়ের ব্যাপার বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আতিক উল্লাহ। তিনি বলেন, চলতি বছর ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষাবাদ হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০-৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।

এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টান। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এরপর তো বাজারে পেঁয়াজের সংকট সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ সংকটের কথা একদমই অমুলক। একইভাবে রসুন সংকট কিছুটা থাকলেও এত দাম বাড়ার কথা নয়।

টিসিবির তথ্যমতে, দেশে বছরে রসুনের চাহিদা প্রায় ৯ লাখ টন। দেশে উৎপাদিত হয়েছে ৬ লাখ ৪৩ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রসুন আমাদনি হয়েছে ৫২ হাজার ৪৬১ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে রসুন আমদানি হয়েছে ৮২ হাজার টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৬৯ হাজার টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের আমদানি হয়েছে ৯২ হাজার টন। যার ৯৬ শতাংশই আমদানি হয়েছে চীন থেকে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

একইভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৫৩ হাজার টন ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ৪২ হাজার টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ লাখ ৭ হাজার টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ লাখ ৬৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ও রসুনের আড়তদার আসলাম উদ্দিন বলেন, বর্তমান চালের চেয়ে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বেশি। মার্চের শুরুতে যে পেঁয়াজ আমরা ১৭ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করছি, এমনকি রোজার শুরুতে ২০-২২ টাকায় বিক্রয় করেছি তা বুধবার পর্যন্ত পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। রসুন বিক্রয় হচ্ছে ২৭০ থকে ২৮০ টাকায়। পেঁয়াজ ও রসুনের দাম কমাতে হলে শীঘ্রই আমদানি শুরু করতে হবে।

তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যে হিসেবে দিচ্ছে তা ধারণা নির্ভর। প্রতিষ্ঠানটির বাজার তদারকি করা প্রয়োজন। তাদের মনে রাখা উচিত পেঁয়াজ একটি পচনশীল পণ্য। এটি মজুদ করে রাখা সম্ভব নয়। আর নষ্ট হলে পণ্যে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিছ বলেন, চলতি বছর উৎপাদন মৌসুমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। এরপর কিছুদিন দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও শেষ এক মাস পেঁয়াজের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এতে সাধারণ ক্রেতার চোখে কান্না ঝরছে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব পেঁয়াজ আমদানি শুরু না হলে দাম আরও বাড়বে। আমদানি শুরু হলে পেঁয়াজের বাজার দর আবার ২০-২২ টাকায় নেমে আসবে।

খাতুনগঞ্জের মাতৃভান্ডারের ব্যবস্থাপক মাহবুব আলমসহ একাধিক ব্যবসায়ীর ভাষ্য, সরকার যতই বলুক দাম পেঁয়াজের দাম কমাতে তাতে কোন কাজ হবে না। যতক্ষণ না আমদানি শুরু হয় ততক্ষণ দাম কমবে না। একইভাবে চীন থেকে বুকিং রেট বেশি দিয়ে রসুন আমদানি করতে হচ্ছে। এ কারণে রসুনের দামও বেড়েছে। আর দেশে রসুনের চাহিদার ৭০ ভাগই চীন থেকে আমদানি করতে হয়।

কনজ্যুমারস এসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম চারগুণ বৃদ্ধি নিশ্চয়ই বিস্ময়ের ব্যাপার। রসুন না হয় আমদানি করতে হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ তো আর আমদানি করতে হয়নি।

তিনি বলেন, ৮০ দশকের আগেও আমরা দেখেছি পণ্য নষ্ট হলে তার দাম কমিয়ে ব্যসায়ীরা দ্রুত বিক্রী করে দিতেন। কিন্তু গত দুই দশক ধরে দেখছি তার উল্টো। পণ্য পচে গেলে বাজারে তার সংকট দেখিয়ে তিন-চার গুণ বেশি দামে বিক্রয় করছে। বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে অসৎ মানুষের নজর পড়েছে।

আরও পড়ুন

No more posts to show
error: Content is protected !!