ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা দরে। এর আগে শুক্রবার সকালে একই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোক্তারা।
ক্রেতারা বলছেন, ভারত তাদের বাজার ঠিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। কিন্তু বাজারে ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রীতিমতো নৈরাজ্য শুরু করেছেন। এক কেজি পেঁয়াজে মুনাফার চেয়েও ১১০ টাকা বেশি দামে বিক্রয় করছেন।
কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার কারণে বাজারে ব্যবসায়ীদের হাতে তেমন পেঁয়াজ নেই। যেহেতু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম, তাই বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে।
চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। আর সন্ধ্যার পরে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। যা শনিবার সকাল থেকে খুচরা বাজারে বিক্রয় করা হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া চীনা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর এ পেঁয়াজ সকালে বিক্রি হয়েছে তা ১২০ টাকা কেজিতে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত আরো দুইবার এভাবে হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। আসলে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। এর আগে গত আগস্টে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেটি বলবৎ থাকার কথা ছিল। সেই আদেশ শেষ হওয়ার আগেই এখন একেবারে রপ্তানিই বন্ধ করে দিয়েছে।
চাক্তাই রহমত ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার কারণে পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে শুল্ক আরোপ করে এবং ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিয়ে সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল। এখন বাজার অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এখন সরকারের উচিত হবে দ্রুত বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখা।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়লে বারবার সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা বলা হয়। যারা সিন্ডিকেটের কথা বলো–তারা আসলে না জেনে কথা বলে। পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। পেঁয়াজ কখনো নির্দিষ্ট সময়ের বেশিদিন মজুদ করে রাখা যায় না।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে–বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়ে এলসি (ঋণপত্র) খোলার পদ্ধতি আরো সহজ করতে হবে। কারণ বর্তমানে এলসিতে শতভাগ মার্জিন পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাই এখন পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে যদি আগের মতো ১০ শতাংশ মার্জিনে এলসি খোলার অনুমতি দেয়া হয়, তবে ব্যবসায়ীরা আমদানিতে আরো বেশি উৎসাহিত হবেন।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ না পেলে বিক্রি করবেন কোত্থেকে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। এখন একদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ৫০ টাকা! ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে, এই খবরে এত টাকা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) জারি আদেশে জানানো হয়েছে, আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে।
এর আগে গত ২০১৯ সালে ও ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত দুই দফায় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরমধ্যে গত ২০১৯ সালে তো পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
তবে এর মধ্যেও আশার কথা শুনিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী সপ্তাহে বাজারে আসছে পাবনা ঈশ্বরদীর দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ। তখন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাবে। আর দাম কমবে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি–১ (তাহেরপুরী), বারি–২ (রবি মৌসুম), বারি–৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছর জুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।
ঈশান/সুপ/মউ