Skip to content

সোমবার- ১৬ জুন, ২০২৫

চট্টগ্রামে রেলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরে জালিয়াতির ভূত!

এবার চেক ইস্যুর ভুয়া আর-নোটে কোটি টাকা আত্নসাতের চেষ্টা, বিষয়টি ধরা পড়ে অডিটরের হাতে

চট্টগ্রামে রেলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরে জালিয়াতির ভূত!

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে অবস্থিত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরে একের পর এক জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। এবার এক কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্নসাতে দুটি বিলের চেক ইস্যুর আর-নোটে (রিসিভ নোট) ভুয়া স্বাক্ষর ও সিল জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

বিল হিসাব দুটির আর-নোট প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে প্রধান হিসাব অধিকর্তার (পূর্ব) অফিসে নিলে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। ঈদুল আজহার সরকারি ছুটি শুরুর আগে গত ২ জুন সোমবার বিষয়টি ধরা পড়লেও তা গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়।

ঈদুল আজহার পর বিষয়টি জানাজানি হলেও কে বা কারা জাল আর-নোট দুটি জমা করেছে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে রাজী নন সংশ্লিষ্ট অধিকর্তারা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও কলাকৌশল নিয়ে তারা বলছেন, কে বা কারা আর-নোট দুটি জমা করেছেন সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় কেউ।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রধান হিসাব অধিকর্তা (পূর্ব) মো. সাইদুর রহমান সরকার বলেন, এসএস আর এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাল কাগজপত্র দাখিল করে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিল আত্নসাতের চেষ্টা করেছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

হিসাব অধিকর্তার ভাষ্য, যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে আর-নোট জমা দেওয়া হয়েছে সেই নামে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই জালিয়াতির দায় সম্পুর্ণ প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের। তবে এই জাল আর-নোট কে বা কারা জমা দিয়েছে, তা সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে ওই বিভাগের কর্মচারিরা জানান, হিসাব অধিকর্তা বিভাগে একটি মাত্র সিসিটিভি ক্যামেরা আছে, সেটিও অকেজো। এ সুযোগে বার বার জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। এর আগে গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে ভুয়া স্বাক্ষরে ৯৭ লাখ টাকা আত্নসাতের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় রেলওয়ের প্রধান হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরের ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারি সাময়িক বরখাস্ত হলেও প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের জালিয়াতির ভূত অধরাই রয়ে গেছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল, চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ অর্থ উপদেষ্টা সাইফুল ইসলাম জানান, প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মো. বেলাল হোসেন সরকার ও এডিশনাল সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মো. রাহিদ হোসেনের স্বাক্ষর ও সিল জাল করে এসএস আর এন্টারপ্রাইজর নামে দুটি আর-নোটের মাধ্যমে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা তোলার জন্য ডিএফএ/স্টোর্সে জমা দেওয়া হয়।

২ জুন সোমবার আর-নোট দুটি যাচাই করতে গেলে অফিসের অডিটর ফারজানা জালিয়াতির বিষয়টি ধরে ফেলেন। পরে এই নোট দুটি বাহককে খুঁজতে গেলে, আর পাওয়া যায়নি। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, টাকা তুলতে ডিএফএ বিভাগে যেতে হয় না। কাগজপত্র যাচাই করে বুক অ্যান্ড বাজেট শাখায় গেলে চেক ইস্যু হয় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এছাড়া প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে এই বিল পাঠানোর কথা বলা হলেও এসএস আর এন্টারপ্রাইজ নামে কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই নেই। বিষয়টি সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে চক্রের হোতাকে ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানান উপ অর্থ উপদেষ্টা সাইফুল ইসলাম।

এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ডিএফএ বিভাগে একটি মাত্র সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। সেটিও অকেজো। এ ঘটনার পর আরও তিনটি নতুন ক্যামেরা লাগানোর তোড়জোড় চলছে। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে। উঠেছে নানা প্রশ্ন। এরমধ্যে হিসাব বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়, কিভাবে এমন জাল বিল জমা হয়। আর ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বিল জমাকারীও কিভাবে সবার অগোচরের পালিয়ে যায়, সেই প্রশ্ন মূখ্য হয়ে উঠেছে।

এদিকে গত ২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভুয়া বিল ও ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ৯৭ লাখ টাকা আত্নসাতের ঘটনা ঘটিয়েছে জালিয়াত চক্র। এ ঘটনায় পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরের ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর এ ঘটনার জন্মদাতা ছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কসমো পলিটন।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার নাবিল আহসান চৌধুরীর দাবি, এ ঘটনায় তারা জড়িত ছিলেন না। কে বা কারা ভুয়া বিলের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট বিভাগ থেকে ৯৭ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে তা তার জানা নেই।

সূত্র জানায়, পণ্য সরবরাহের বিপরীতে কসমো পলিটন প্রতিষ্ঠানের মালিক নাবিলের পক্ষে চারটি বিল দাখিল করা
হয়। বিলগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে অর্থ ছাড়ও হয়; কিন্তু‘ ওই চারটি বিলের মধ্যে ৯৭ লাখ টাকার একটি বিল ছিল। কিছু দলিলাদি পরিবর্তন করে সেই বিলটি পুনরায় দাখিল করে। যাচাই-বাছাই শেষে বিলটি পাস হয় এবং সীমান্ত ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভুয়া বিল দাখিলও জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনে ঠিকাদারের সঙ্গে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের জালিয়াতির ভূত এবং হিসাব বিভাগ ও স্টোরস শাখায় সক্রিয় সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন কাজ করেছে। কিন্তু এ ঘটনায় হিসাব বিভাগের ৭ কর্মকর্তার বরখাস্ত করা হলেও অধরা রয়ে গেছে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সেই ভূত।

এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) মো. বেলাল হোসেন সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এমনকি হোয়্যাটস অ্যাপে মেসেজ প্রেরণ করা হলেও তিনি কোনরকম সাড়া দেননি। একইভাবে সাড়া মেলেনি এডিশনাল সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক রাহিদ হোসেনেরও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সুবক্তগীন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। এসব ঘটনার পর্যালোচনা চলছে। জালিয়াত চক্রের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

জনপ্রিয়

You cannot copy content of this page