বৃহস্পতিবার- ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

চট্টগ্রামে শুরু তিনদিনের বৈশাখী মেলা, কাল জব্বারের বলীখেলা

চট্টগ্রামে শুরু তিনদিনের বৈশাখী মেলা, কাল জব্বারের বলীখেলা
print news

ট্টগ্রামের শুরু হয়েছে তিনদিনের বৈশাখী মেলা। আজ বুধবার সকাল থেকে এই মেলা শুরু হয়। নগরীর লালদীঘি ময়দানে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলা ঘিরে চট্টগ্রামে এই মেলা বসে। আর বলীখেলা অনুষ্ঠিত হবে বৃহ¯পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে এ তথ্য জানান আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী। তিনি বলেন, প্রতিবছরের মতো বাংলা বর্ষের ১২ বৈশাখ অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল লালদীঘির মাঠে বলীখেলা হবে। বাঁশ ও বালি দিয়ে মাঠে বলিখেলার মঞ্চ (রিং) তৈরি শেষ পর্যায়ে। তবে বলীখেলার আগের দিন ২৪ এপ্রিল বুধবার সকাল থেকে লালদীঘির মাঠ ঘিরে শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলা। চলবে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে বলীখেলায় অংশগ্রহণার্থীদের নিবন্ধন চলছে। আজও নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। খেলায় যারা অংশ নেবেন, তাদের জন্য এবার আমরা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছি। সার্বিক আয়োজনে সহযোগিতা দিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

জহর লাল হাজারী বলেন, প্রতিবছর এ সময়টাতে তাপপ্রবাহ থাকে। এবারও তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা শরবত পানের বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। চিকিৎসকরাও বলছেন, যততত্র বিক্রি হওয়া শরবত যেন পান করা না হয়। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেলায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হবে।

জহর লাল হাজারী আরও বলেন, চসিকের মেয়র মহোদয় দেশের বাইরে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ও রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাইরে থাকছেন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান আপাকে বলা হয়েছে। সিএমপি কমিশনারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খেলা ও মেলায় অংশগ্রহণ করবেন।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

এর আগে গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বলীদের জার্সি এবং চ্যা¤িপয়ন ও রানার-আপ ট্রফি উন্মোচন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

নগরীর লালদিঘির পাড়ে চসিক পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে মেয়র ঘোষণা দেন, আগামি প্রজন্ম যেন বলীখেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে, সে জন্য কুস্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।

অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এ বলীখেলা আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। বলীখেলাকে ঘিরে তিন দিনের মেলা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আসেন। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়। সবার কাছে অনুরোধ, নতুন প্রজন্ম যেন আমাদের এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখে সেজন্য আমাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে।

মেয়র বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে বলীখেলায় অংশ নিচ্ছেন, কুস্তিগীর, রেফারি ও আয়োজক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি করা হোক। এবারের বলীখেলার পরেই এ বিষয়ে আয়োজকরা উদ্যোগ নেবেন। একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হবে। জায়গা আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেবো। এ জন্য যা যা সহযোগিতা দরকার, সিটি করপোরেশন ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে করা হবে।

কমিটির সহসভাপতি সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ বলেন, এটি ঐতিহাসিক বলীখেলা। এবার হবে ১১৫তম আসর। সারা বিশ্বে এ খেলা তুলে ধরতে সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখতে হবে। বলীখেলা টুরিজম বোর্ডের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বলীদের প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। বলীখেলার পাশাপাশি তিন দিন ধরে মেলা চলবে। এবারের আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে এনএইচটি হোল্ডিংস লিমিটেড। মেয়র মহোদয় একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এবারের আয়োজন শেষেই যেন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা করা হবে।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

বলীখেলার এবারের পৃষ্ঠপোষক এনএইচটি হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর বলেন, ছোট থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কখন খেলাটা ও মেলাটা হবে। চট্টগ্রামের সংস্কৃতি বলীখেলা। চট্টগ্রামের হারানো ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে। এ লক্ষ্যে বলীখেলায় পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছি আমরা।

আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সাধারণ স¤পাদক শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, ২৫ এপ্রিল আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। ১৯০৯ সালে এ বলীখেলার প্রচলন করেছিলেন আবদুল জব্বার সওদাগর। করোনার কারণে গত দুই বছর বলীখেলা হয়নি। এ খেলা সফল করার জন্য সবার সহযোগিতা চাই।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন, যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বলীখেলা নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি।

সূচনার ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর লালদিঘির মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলীখেলা। বলীখেলার একদিন আগে-পরে তিন দিন ধরে লালদীঘির পারসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বসে মেলা। এ মেলায় গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে নানা পণ্যের পসরা বসে।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

এদিকে জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে যান চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামি ২৪ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত লালদিঘি অভিমুখী সকল প্রকার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আগামি ২৫ এপ্রিল নগরীর লালদীঘিপাড় মাঠে ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মেলায় দেশের দূরদূরান্ত হতে পণ্য বিক্রেতাগণ তাদের পণ্য দ্রব্যাদি নিয়ে আসবে এবং ক্রেতা সাধারণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকজনের সমাগম হবে। বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা চলাকালীন ক্রেতা-বিক্রেতাসহ আগত লোকজনের সমাগমের কারণে লালদিঘি মাঠ সংলগ্ন আন্দরকিল্লা মোড় (জামে মসজিদের সামনে), পুরাতন টেলিগ্রাফ রোড, বোস ব্রাদার্স মোড় (পুলিশ প্লাজার সামনে), রাইফেল ক্লাব, কোতোয়ালী মোড় (সিডিএ গেইট), আমানত শাহ মাজার রোডের মুখ এবং টেরিবাজার ফুলের দোকান (তিন রাস্তার মুখ)-এ রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন প্রদান করা হবে। ফলে উক্ত সময়ে লালদিঘি অভিমুখে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানিসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহনসমূহ কোতোয়ালী মোড় হয়ে ফিরিঙ্গীবাজার মেরিন ড্রাইভ রোড ব্যবহার করে চাক্তাই ও রাজখালী হয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে যাতায়াত করবে।

লালদিঘি মাঠে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখলা উপলক্ষে অনুষ্ঠিতব্য বৈশাখী মেলা সুষ্ঠুভাবে স¤পন্ন করার লক্ষ্যে এই নির্দেশনা অনুসরণের জন্য সকল যানবাহন চালক ও যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঈশান/মখ/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show