চট্টগ্রাম শহর ও উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এলাকায় শোডাউন দিচ্ছে বিএনপির একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা। চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে সরকারি দপ্তর এলাকায় মিছিল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন সূত্র মতে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিআরবি-পাহাড়তলি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিপিসি, কাস্টমসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে মিছিল করছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
একইভাবে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, পটিয়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারাসহ সবগুলো উপজেলায় প্রতিদিন মিছিল নিয়ে শোডাউন করছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। যদিও অন্য দলের কোন নেতাকর্মী মাঠে নেই।
অভিযোগ উঠেছে, শুধু মিছিল নয়, বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তারা পেশীশক্তি দেখাচ্ছে। দাবি করছে নানা অনৈতিক সুবিধা, মোটরসাইকেল ও বন্যার্তদের নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা।
এমনকি বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনে ঢাকায় নিহত ঢাকাটাইমস এর এক সাংবাদিকের পরিবারের সহায়তার নামেও চাঁদা দাবি করছে চট্টগ্রামে কর্মরত ওই পত্রিকার এক সাংবাদিক। তিনিও চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।
এছাড়া চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত সিউএফএল কারখানার জেটি এলাকায়ও মিছিল করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে জেটি এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং কাজ থেকে বিরত থাকে বেশিরভাগ শ্রমিক।
জেটি এলাকায় মূলত সার লোড-আনলোড করার কাজ চলে। সপ্তাহখানেক ধরে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদ এলাকা, কাফকো ও কোরিয়ান ইপিজেড এলাকায় ঘন ঘন মিছিল করছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, হেলাল উদ্দিন একসময় আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। উপজেলার আরেক বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবিরকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে তিনি দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। যেটি চট্টগ্রাম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
পরবর্তীতে তদবির করে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরে পান হেলাল উদ্দিন। যদিও বর্তমানে তিনি নিজেকে সদস্য সচিব বলে পরিচয় দিচ্ছেন। এ পরিচয়ে তিনি অংশ নিচ্ছেন নানা অনুষ্ঠানে। শোডাউন দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এসব আয়োজনের ব্যানারে নিজের পদবি হিসেবে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব উল্লেখ করছেন তিনি।
কয়েকজন শ্রমিক নেতা জানান, বিএনপি নেতা হেলালের অনুসারীরা মূলত বর্তমান ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ছোট ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনির ব্যবসায়িক পার্টনার আজিজের ব্যবসা দখলে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা আজিজের বেশ কিছু ব্যবসা দখলেও নিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, সরকারি কারখানা সিইউএফএল এবং বিভিন্ন দপ্তরে বিএনপির পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ আসছে। এ কারণে আমরা ওই এলাকাগুলোতে শোডাউন দিচ্ছি।
আমাদের নেতা তারেক রহমানের ঘোষণা, চাঁদাবাজি চলবে না। তাই আমি এলাকায় শোডাউন দিচ্ছি যেন কেউ চাঁদাবাজির সুযোগ না পায়। আমার মোবাইল নম্বরও দিয়ে দিচ্ছি, যেন সরাসরি আমাকে অভিযোগ করতে পারে।
এ বিষয়ে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, জেটি এলাকায় মিছিল-মিটিং করেছে বিভিন্ন গ্রুপ। পট-পরিবর্তনের পর আগের ঠিকাদাররা গা ঢাকা দিয়েছে। এ সুযোগে তাদের জায়গায় আসতে চায় বিভিন্ন গ্রুপ। তবে আমাদের কারখানার কাজে কোনো ধরনের ব্যাঘাত এখনো ঘটেনি। এমন হলে আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তা নেব।
এদিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভাষ্য, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির দু‘গ্রুপ বিভক্ত হয়ে উপজেলায় প্রতিদিন শোডাউন করছে। এ নিয়ে চরম আতঙ্কে থাকেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাছে নানা অনৈতিক সুবিধাও দাবি করেছেন বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।