
চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকায় ডিসি পার্ক এলাকায় ট্রাক ও লরি রেখে দখলবাজি করার সময় বাধা পেয়ে হামলা চালিয়েছে প্রাইম মুভার ও লরি চালকরা। এ সময় পার্কের গেট, টিকিট কাউন্টার এবং বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়। মারধর করা হয় পার্কে আসা দর্শনার্থী ও নিরাপত্তাকর্মীদের।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা থেকে উল্টো চট্টগ্রাম বন্দরের সড়ক অবরোধ করে প্রাইম মুভার ও লরি চালকরা। রাত ১২ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে আছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এতে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ঘটনায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
প্রাইম মুভার ও লরি চালকরা বলছেন, ডিসি পার্কে তাদের সহকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বেন না। কিন্তু ডিসি পার্কে নিয়োজিত নিরাপত্তকর্মীরা বলছেন, লরি-ট্রাক চালক শ্রমিকরা হামলা চালিয়ে ডিসি পার্ক তছনছ করে দিয়েছে। মারধর করে গুরুতর আহত করেছে নিরাপত্তারক্ষীদের।
নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, এক সময়ের মাদকের আখড়া দখলমুক্ত করে চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক গড়ে তোলা হলেও প্রাইম মুভার ও লরি চালকরা তাদের গাড়ি রেখে স্টেশন হিসেবে দখলে রাখা হয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে ডিসি পার্কের সামনে ট্রাক ও লরি রাখাকে কেন্দ্র করে দর্শনার্থীদের সঙ্গে চালক ও সহকারীর মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু লরি-ট্রাক চালক শ্রমিক হামলা চালিয়ে পার্কের গেট, টিকিট কাউন্টার এবং বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে।
উল্টো রাত সাড়ে ৯টার দিকে শত শত ট্রাক, প্রাইম মুভার ও লরি চালকরা সড়কে মিছিল সহকারে নেমে আসেন। এ সময় তারা সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় রাস্তার উভয় পাশের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন। অনেক চালকের কাছ থেকে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিতেও দেখা গেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার ও টেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ওই সল্টগোলা ক্রসিং এলাকাতেই।
কাস্টমস মোড়ে বিক্ষুব্ধ এক শ্রমিক বলেন, ‘বিএম ডিপোর একটি লরি ফৌজদারহাট দিয়ে যাচ্ছিলো। ওই সময় ডিসি পার্ক থেকে একটি প্রাইভেটকার বের হয়। লরি চালককে সিগন্যাল দিলেও সে শুনেনি। এরপর ওই গাড়ির চালককে দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে পার্কের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও পাঁচজন চালক তাকে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে গেলে তাদেরও বেঁধে রেখে ব্যাপক মারধর করেন ডিসি পার্কের নিরাপত্তাকর্মীরা। পর্যায়ক্রমে আরও শ্রমিকরা গেলে ৩০ জনের মতো শ্রমিককে তারা আটকে রেখেছেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ‘এক দফা এক দাবি, ডিসি পার্ক বন্ধ চাই’, ‘আমার ভাইয়ের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কের দুই পাশের ব্যক্তিগত ও অন্যান্য গণপরিবহন আটকে দেন তারা।
এদিকে বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার টেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. কায়েস চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, এখন পর্যন্ত তাদের ২০ জন শ্রমিকের খোঁজ তারা পাচ্ছেন না। বর্তমানে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী সদস্যরা আছেন। তাদের সাথে তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। যারা শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত তাদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়বেন না তারা।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বন্দর বিভাগের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) কবির আহম্মদ বলেন, ‘ডিসি পার্কে কয়েকজন গাড়ি চালককে মারধর করা হয়েছে—এমন অভিযোগ করছেন সড়ক অবরোধ করা শ্রমিকরা। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের বিচার না হলে তারা সড়ক ছাড়বেন না। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত প্রশাসক (রাজস্ব) সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফিরছি। যারা এ হামলা করেছে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। সেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।