
ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় কাস্টমস জটিলতায় ব্যাহত হয় চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। এতে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। যা এখনো পর্যন্ত পুরোদমে শুরু হয়নি। আর এতে প্রায় ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে কাস্টমস।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার সুলতানুল আরেফিন। তিনি বলেন, ইন্টারনেট চালু না থাকায় কাস্টমসের ক¤িপউটারগুলোয় অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড (পণ্যের আমদানি-রপ্তানির আধুনিক শুল্কায়ন পদ্ধতির আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার) অচল হয়ে পড়ে। এতে কাস্টমসের শুল্ক আদায় বন্ধ হয়ে যায়।
তবে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড চালু করা সম্ভব হয়। এতে অভ্যন্তরীণভাবে অর্ধ সমাপ্ত থাকা কাজগুলো আমরা এগিয়ে নিতে পারছি। এই সফটওয়্যার শুধু চট্টগ্রাম কাস্টমসের কাছে সীমাবদ্ধ। বাইরের ক¤িপউটারে এই সফটওয়্যার খোলা যাবে না। ফলে নতুন কোনো পণ্য অন্তর্ভুক্তি করা যাচ্ছে না। ফলে পণ্যের জাহাজীকরণ বন্ধ রয়েছে এখনো।
কাস্টসের এই কর্মকর্তা জানান, দেশব্যাপী ইন্টারনেট না থাকায় গত বৃহ¯পতিবার রাত থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে শুক্রবার থেকে। তবে ম্যানুয়াল পদ্ধতি বা সেমি ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা কিছু আমদানি পণ্য ছাড়ের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মাতারবাড়ী ও চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ার জন্য ১৩টি জাহাজকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব জাহাজের বেশিরভাগ মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লাবাহী ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের জ্বালানি তেলবাহী ছিল।
সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গড় হিসাবে প্রতি মাসে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। প্রতিদিন গড়ে ২১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। এই হিসাবে গত ৭ দিনে ১ হাজার ৫১৬ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
অন্যদিকে বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৯ হাজার একক কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয়ে থাকে। প্রতি কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে বন্দরের চার্জ ৪৫ মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে বন্দরের রাজস্ব আদায় হয় ৪ লাখ ৫ হাজার মার্কিন ডলার (প্রতি ডলার ১১৭ টাকা হিসাবে ৪ কোটি ৭৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা)। বর্তমানে রপ্তানিপণ্য জাহাজীকরণ হতে না পারায় কনটেইনার হ্যান্ডেলিং কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে এক দিনে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং বাবদ বন্দরের আয় কমেছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ও বাল্ক পণ্যেও প্রায় সমপরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে। ফলে প্রতিদিন বন্দরের আয় কমেছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। গত ৭ দিনে এই সংখ্যা প্রায় ৩৫ কোটি টাকা হতে পারে। এতে গত ৭ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের ক্ষতি প্রায় ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, টার্মিনাল অপারেটর সিস্টেম নামে বন্দরের নিজস্ব সফটওয়্যার রয়েছে, যা অনলাইননির্ভর। এ ছাড়া সিটিএমএস পদ্ধতি (২০০৪-০৫ সালে চালু হয়েছিল) রয়েছে কাস্টমসের সঙ্গে যুক্ত। অপরদিকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর কনটেইনারে ভর্তি করার অনুমতি পাওয়া যায়। এভাবে প্রায় সাত থেকে আটটি ধাপের পর পণ্যটি জাহাজীকরণের জন্য উপযোগী হয়। এর সব কটি ধাপ অনলাইনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আবার ব্যাংকের টাকা জমা দেওয়ার কাজটিও অনলাইনে হয়ে থাকে। এগুলোর সঙ্গে কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা (পণ্য আদান-প্রদানের একটি আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার) সফটওয়্যারও রয়েছে। তাই অনলাইন ছাড়া আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু করা অনেকটা অসম্ভব হলেও বর্তমানে ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতে কিছু আমদানি পণ্য খালাস করা হচ্ছে। বন্দরের জেটিতে কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে জট বাড়তে পারে-এমন আশঙ্কা থেকেও আমরা পণ্য ছাড়ের চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডে ৫৩ হাজার একক কনটেইনার রাখার জায়গা থাকলেও গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৪১ হাজার ৬২০ একক কনটেইনার জমা হয়েছে। কনটেইনার ডেলিভারি না হলে বন্দরে জটের পরিমাণ বাড়বে।