বৃহস্পতিবার- ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এখন চাঁদা তুলছে ‘বিএনপি নেতারা’

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এখন চাঁদা তুলছে 'বিএনপি নেতারা'
print news

ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বৃহৎ বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যবসায়ী সমিতি, ট্রাকমালিক সমিতি, আড়ৎদার সমিতির কাজ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করত। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পেলেও ফের শুরু হয়েছে অস্বস্তি। সেই চাঁদা নিচ্ছে এখন বিএনপি নেতারা। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, বিএনপি নেতাদের নামে প্রতি ট্রাক থেকে ৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হচ্ছে। এতে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি বন্ধে আন্দোলনে নেমেছেন খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। আগামী সাত দিনের মধ্যে চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম বলেন, কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই। খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ ট্রাক পণ্য নিয়ে আসা-যাওয়া করে। এর মধ্যে কিছু আসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আবার কিছু আসে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। আবার পণ্য নিয়ে খাতুনগঞ্জ থেকে বিভিন্ন জেলা যায়। এসব গাড়ি প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় এখন বিএনপি নেতাদের নাম ভাঙিয়ে ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে ট্রাক চালকরা আমাদের এসব কথা জানিয়েছেন। চাঁদাবাজির কারণে আবারও পণ্যের দাম বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, নিজাম কাজলের নেতৃত্বে এই চাঁদাবাজি হচ্ছে। তারা নিজেদেরকে বিএনপির নেতা পরিচয় দিচ্ছেন। নিজামের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে ব্যবসায়ীরা বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আগে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য নিয়ে কোনও ট্রাক খাতুনগঞ্জে এলে পথে পথে পৌরসভার কর, পুলিশের নামে এবং রাজনৈতিক নেতাদের নামে চাঁদা আদায় হতো। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছুদিন চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। গত কিছুদিন ধরে আবারও চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বহদ্দারহাট থেকে বাকলিয়া রাজাখালী পর্যন্ত এলাকায় পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ট্রাকগুলো কোথাও দাঁড়ালে তাদের চাঁদা দিতে হয়। একইভাবে নগরীর কোতোয়ালি থানার জেলরোড দিয়ে কোনও পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকলে চাঁদা দিতে হয়।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলেন, আগে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনের নামে এই চাঁদা আদায় করা হতো। ৫ আগস্টের পর থেকে এক সপ্তাহ চাঁদা আদায় বন্ধ ছিল। গত কয়েকদিন ধরে আবারও শুরু হয়েছে। এবার চাঁদা আদায়কারীরা বিএনপি নেতাদের নামে তুলছেন।

জানা গেছে, ২০২১ সালে খাতুনগঞ্জে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ে জড়িতদের একটি নামের তালিকা দেওয়া হয়েছিল সিএমপি কমিশনারের কাছে। ওই তালিকায় ছিল খোরশেদ আলম, নিজাম কাজল, মহিউদ্দিন জনি, মিনহাজ উদ্দিন রনি, নজরুল ইসলাম, বেলাল হোসেন বেলাল, জেবল হোসেন, কামাল উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ মুন্সি, আরিফ মিয়া, নুরুল হক ও মো. মিলন নামে ব্যক্তিদের নাম। এখন তারা ও তাদের সহযোগীরাই বিএনপির নামে চাঁদাবাজি করছেন।

চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনামুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজ এখন আবারও ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি, চাঁদাবাজ যে রাজনৈতিক দলের হোক, তাদের প্রতিহত করা হবে। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীর স্থান এখানে হবে না। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যদি তাদের গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে আমরা ব্যবসায়ীরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।

কোতোয়ালি থানার ওসি এস এম ওবায়েদুল হক বলেন, চাঁদা আদায়ের অভিযোগে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করছেন সেটা আমরা অবগত আছি। পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে এ ধরনের অভিযোগ আমরা এখনও পাইনি। পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়