বৃহস্পতিবার- ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

জনরোষে এলাকাছাড়া তবুও মিরসরাইয়ে এমপি হতে চান গিয়াস উদ্দিন!

print news

বিগত কয়েক বছর ধরে জনরোষের শিকার হয়েছিলেন মিরসরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন। হামলার শিকারও হয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। এরপর থেকে এলাকা ছাড়া তিনি। থাকেন চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজারের বাসায়। তবুও তার স্বপ্ন, এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসন থেকে তিনি এমপি হবেন।

সেই আশায় গত ৩০ নভেম্বর এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার করতে এর আগের দিন বুধবার তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবেও। সেখানেই হাতে গোনা গুটিকয়েক অনুসারি উপস্থিত ছিলেন তার পক্ষে।

আর গণমাধ্যমকর্মী ছিলেন অন্তত তিনশতাধিক। যাদের প্রশ্নের জবাবে গিয়াস উদ্দিন বলেন, হামলা এড়াতে হয়তো আমি এলাকা থেকে দুরে আছি। কিন্তু ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারলে নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে আমি আশাবাদি। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড এবং সামাজিক স¤পৃক্ততার কারণে জনগণ তাকেই মিরসরাইয়ের এমপি বানাবেন বলে তার বিশ্বাস।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি কারো ফেভার চাই না। মিরসরাইয়ের মানুষ যাতে তার ভোটাধিকার সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারে, সেজন্য আপনারা সহযোগিতা করবেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচনী কাজে যারা নিয়োজিত আছেন, তারা যেন এটার জন্য যত্নবান থাকেন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি সোচ্চার থাকে, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগ এবার মনোনয়ন দিয়েছে বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলকে। সে কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রত্যক্ষভাবে সঙ্গে থাকতে না পারলেও অনেকেই পক্ষে আছে বলে দাবি করেন গিয়াস উদ্দিন।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের সাথে থাকার দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আমলে মিরসরাইয়ে ২৯টি লাশ পড়েছে। আমি সবার লাশ কাঁধে নিয়েছি। ১৯৯১ সালে বিএনপির আমলে যেসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছে, তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে সেবা দিয়েছি।

তখন থেকেই আমি প্রতিদিন মেডিকেলে যাই আমার এলাকার রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য সবার সুখে দুঃখে পাশে থেকেছি। যার কারণে মিরসরাইয়ের মানুষ আমাকে বলে মেডিকেল বন্ধু।

তরপরও আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে গিয়াস উদ্দিন বলেন, মিরসরাই আসনের সাত বারের এমপি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন দুই বছর আগে আর নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর মিরসরাইবাসী আশায় বুক বেঁধেছিলেন, আমি এমপি হতে পারব।

একসময় গিয়াস উদ্দিন ছিলেন মোশারফের ঘনিষ্ঠ। কিন্তু নানা কারণে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তাদের এ দূরত্ব ঘিরে মিরসরাইয়ে দুটি বলয় তৈরি হয়েছে। ২০০৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন। পরের দুইবার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ স¤পাদক শেখ আতাউর রহমান। অন্যদিকে গিয়াস উদ্দিন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে দুই নির্বাচনেই হন দ্বিতীয়। আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর বিরোধে জয় হয় বিএনপি প্রার্থীর।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

এবারও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গিয়াস স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আর এ নিয়ে ক্ষোভ ও হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচনি এলাকা মিরসরাইয়ের মানুষের মধ্যে। মিরসরাইয়ের সাধারণ মানুষের মতে, গিয়াস উদ্দিন এলাকাছাড়া বিগত কয়েক বছর ধরে। থাকেন চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজারে। আর সেখান থেকে নির্বাচন করে তিনি স্বপ্ন দেখছেন মিরসরাই আসনের এমপি হওয়ার।

মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর দাবি, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী। উনি এখন উনার সন্তান রুহেলকে প্রার্থী করেছেন। উনি যতদিন বেচে থাকবেন মিরসরাইয়ের লোকজন ততদিন উনার পক্ষেই থাকবেন।

গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম শহরে থেকে এমপি হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছেন, তা গুড়েবালি। এ স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না। আসলে গিয়াস উদ্দিনকে নানা প্রলোভন দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী করা একটি দূরভিসন্ধি। কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা পরিচয়ে এক ব্যক্তি তাকে নাচাচ্ছেন। ওই ব্যক্তিও এলাকায় একাধিকবার জনরোষের মুখে পড়েছেন। হামলার শিকার হয়েছেন গিয়াস উদ্দিনও।

সূত্র মতে, চলতি বছরের গত ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সদর ইউনিয়নের নূরজাহান ক্লাবে সাবেক মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের মতবিনিময় সভায় হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করেছিলেন গিয়াস উদ্দিন।

এর আগে গত ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর সকাল ৮টায় মিরসরাইয়ের নিজামপুর কলেজ এলাকায় মিরসরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের ওপর সশস্ত্র হামলার পাশাপাশি তার গাড়িও ভাঙচুর করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় আহত হন গিয়াস উদ্দিন। হামলার জন্য নিজ দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গ্রুপকে দায়ী করেন গিয়াস উদ্দিনের অনুসারীরা।

আরও পড়ুন :  মাদক বাণিজ্যেরও গডফাদার ষোলশহর রেল জংশনের মাস্টার জয়নাল!

ওই সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গিয়াস উদ্দিন বলেছিলেন, আমার এক কর্মীর ঘরে একটি গ্রুপ সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ ঘটনার খবর পেয়ে সকাল-সকাল আমার লালখান বাজারের বাসা থেকে মিরসরাই রওনা দিই। আমি নিজামপুর কলেজের এলাকায় পৌঁছানোর পরপরই ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ অস্ত্রসহ এসে আমার ওপর অতর্কিত হামলা করে। এতে আমি গুরুতরভাবে আহত হই।

গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, মিরসরাইয়ের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের জেরে এ হামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে।

এছাড়া নারীকে কু-প্রস্তাবের অভিযোগও রয়েছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী নারী ২০২১ সালের ২২ মে কু-প্রস্তাব এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রকাশ পায়। এনিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই নারী মিরসরাইয়ের মায়ানী ইউনিয়নের মধ্যম মায়ানী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তার স্বামী আনোয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

( স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের কীর্তি নিয়ে আসছে আরও প্রতিবেদন। পাঠকরা চোখ রাখুন দৈনিক ঈশানে)

ঈশান/খম/মউ

আরও পড়ুন

No more posts to show