ডলার সংকটের কারণে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধের মধ্যেও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের ১২৫৬টি বিলাসবহুল গাড়ি এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে ৫৫৯টি গাড়ি খালাসের পর বাকি গাড়ি নিয়ে মোংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে চলে যায় এমভি মালয়েশিয়া স্টার নামে গাড়ি বহনকারী জাহাজটি।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বৃহস্পতিবার (৪ মে) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে বিলাসবহুল গাড়িগুলো আমদানি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও ঢাকার অন্তত ১৫টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব গাড়ি আমদানির সাথে জড়িত।
তিনি বলেন, বিলাস বহুল এসব গাড়ি বহনকারী জাহাজ এমভি মালয়েশিয়া স্টার গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরের বহি:নোঙরে আসে। গত তিন দিন আগে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়ে। এরপর পরবর্তি দুই দিনে বন্দরের ৭ ও ৮ নম্বর জেটিতে জাহাজ থেকে ৫৫৯টি প্রাইভেট কার, রেসিং কার, পাজেরো জিপ ও মাইক্রোবাস খালাস করা হয়। যেগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের ১ ও ২ নম্বর শেডে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
আর বাকি ৭০৬টি গাড়ি নিয়ে জাহাজটি বুধবার বিকেলে মোংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায়। এসব গাড়ি সেখানেই খালাস করা হবে। গাড়িগুলো আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও স্বত্ত্বাধিকারির নাম এই মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়। আর আমদানিকৃত গাড়িগুলো থেকে সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে বলে জানান এনামুল করিম।
বন্দরের একটি সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণে অর্থনীতি বিধ্বস্ত হওয়ার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে গত নয় মাস আগে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে সরকার। আর এর মধ্যেই দেশে এলো বিলাসবহুল গাড়ির বিশাল এই চালান।
সূত্র জানায়, আমদানি করা ১২৫৬টি গাড়ির মূল্য প্রায় ৫০০ কোটির টাকার মতো। গাড়ির বিশাল এ চালান আমদানির সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ১৫ জন ব্যবসায়ী স¤পৃক্ত রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমসহ সবদিক থেকে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে।
বন্দর ব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমানে দেশের বাজারে গাড়ির মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। আর আসন্ন বাজেটে আমদানি করা গাড়িতে শুল্কহার বাড়তে পারে এ তথ্য থেকেই বেশি লাভের আশায় এসব গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। আর ডলারের মূল্য যেহেতু বেশি তাই গাড়ির আমদানিমূল্য স্বাভাবিকভাবেই বেশি পড়ছে।
তবে ভিন্ন কথা বলেছেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যাল ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) এর সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন। গাড়ি আমদানির কথা স্বীকার করলেও তিনি বলেন, ডলার সংকট সৃষ্টির আগেই খোলা এলসিতে এসব গাড়ি কেনা হয়েছে। আমদানি নিষিদ্ধের কারণে গাড়িগুলো এতদিন আনা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতি মাসে যেখানে একটি করে আমদানিকৃত গাড়ির জাহাজ আসতো, সেখানে গত নয় মাসে আমদানি করা গাড়ির কোন জাহাজ দেশে আসেনি। তাই এক জাহাজে একত্রে এত গাড়ি এসেছে। এতে বাজেটকে সামনে রেখে বেশি মুনাফা লাভের কিছুই নেই।
বারডিভার আরেক সদস্য আমিনুল হকও বলেন প্রায় একই কথা। তিনি বলেন, দীর্ঘ নয় মাস বাজারে কোন গাড়ি আসেনি। তাই অনেকে গাড়ি সংকটে আছে। গাড়ির চাকা ঘুরলেই তো দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে। তাই বাজারে এখন অনেক গাড়ির প্রয়োজন। তাছাড়া আগের জমানো গাড়িই আনা হয়েছে। এসব গাড়ির জন্য নতুন কোন এলসি খোলা হয়নি।
এসব গাড়ি কারা আমদানি করেছেন এবং গাড়িগুলোর শুল্কায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মুশফিকুর রহমান বলেন, গাড়িগুলো কারা আমদানি করেছে তা এ মুহুর্তেই বলা সম্ভব নয়। তবে নিয়ম অনুযায়ী গাড়িগুলোর শুল্কায়ন করা হবে।
ডলার সংকটের কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বিলাস বহুল পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টমসের এই কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি আমদানি বন্ধ। গাড়ি আনতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া বন্ধ হয় গত বছর। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব গাড়ি অনেক আগের এলসি করা। সেসব এলসির পণ্য এখন আসছে। সেটা যদি হয়ে থাকে তাহলে এসব গাড়ি শুল্কায়নে কোন বাধা আছে বলে মনে হয় না। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখেই শুল্কায়ন করা হবে।