মঙ্গলবার- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারি ধান ব্রি-১০৫

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারি ধান ব্রি-১০৫
print news

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ব্রি ধান-১০৫ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। এ ধানে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) মান ৫৫। তাই লো জিআই মান সম্পন্ন এ ধানের ভাতকে ডায়াবেটিক ভাতও বলা যায়।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রমতে, গত বছরের মার্চে চাষের অনুমোদন পায় নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান-১০৫। তারপর গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা মাঠে ধানটি চাষ করা হয়। এটি বোরো মৌসুমের ধান হলেও আমন মৌসুমে বীজ হিসেবে চাষাবাদ করা হয়। এতে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়।

এ জাতের ধান পাকার পরও গাছ সবুজ থাকে। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা হয় ১০১ সেন্টিমিটার। গড় ফলন হেক্টরে ৭ দশমিক ৬ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৮ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের দানার আকার ও আকৃতি মাঝারি, সরু ও রং সোনালি। এর জীবনকাল ১৪৮ দিন। এ জাতের ১ হাজারটি দানার ওজন ১৯ দশমিক ৪ গ্রাম। এতে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭ শতাংশ এবং প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। রান্না করা ভাত ঝরঝরে এবং সুস্বাদু।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ডায়াবেটিস রোগীরা এ ধানের চালের ভাত নিরাপদ মনে করে পেটভরে খেতে পারবেন। লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন এ ধানের চালের ভাত খেলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করা খুব কম যাবে। ব্রি’র প্রধান কার্যালয়ে পুষ্টি গবেষণা বিভাগের পরীক্ষায় ব্রি ধান-১০৫ এর পুষ্টিমান নির্ণয় করে এ তথ্য জানা গেছে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এ ছাড়া এ ধান ভবিষ্যতে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমাদের গবেষণা মাঠে উৎপাদিত ব্রি ধান-১০৫ এর বীজ বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও বাগেরহাট জেলায় কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেই।’

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

কৃষকরা জানান, ‘নতুন এ জাতের ধান চাষে সেচ ও সার কম লেগেছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এ জাতের ধানচাষ লাভজনক। বাজারে এ ধানের চাহিদা রয়েছে। তাই আগামীতে আমরা ডায়াবেটিক রাইস চাষ সম্প্রসারণ করব।’

কৃষক সুমন লস্কর বলেন, ‘ব্রি ধান-১০৫ আমরা প্রথম চাষাবাদ করেছি। এ ধানের হেক্টর প্রতি সাড়ে ৭ টন ফলন হয়েছে। ধানটি লম্বা ও চিকন। ডায়াবেটিস রোগীরা এ ধানের চালের ভাত খেতে পরেন। তাই অনেকেই এ ধান চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমার জমিতে উৎপাদিত সব ধান বীজ হিসেবে রেখে দিয়েছি। এ ধান অন্তত ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারব।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় এ ধানের পরীক্ষামূলক আবাদ করা হয়। এ তিন জেলার ৮ দশমিক ৭ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-১০৫ প্রথম আবাদেই সাফল্য মিলেছে। হেক্টরপ্রতি কৃষক ৬ দশমিক ৫ টন থেকে ৭ দশমিক ৫ টন ফলন পেয়েছেন। ফলে এ ধান চাষে কৃষক লাভবান হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

কৃষি বিজ্ঞানী সৃজন চন্দ্র দাস জানান, নতুন উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে ব্রি-১০৫ বোরো মৌসুমের একটি কম জিআই সম্পন্ন ডায়াবেটিক ধান। প্রচলিত ধানগুলোতে জিআই এর মান ৬৫ থেকে ৭৫। কিন্তু ব্রি-১০৫ ধানে জিআই এর মান ৫৫। এ চালের ভাত খেলে রক্তে শর্করা কম নামবে। এ ধানের বৈশিষ্ট্য হলো মাঝারি লম্বা ও চিকন দানা। কম জিআই হওয়ার কারণে এটি ডায়াবেটিক চাল হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show
error: Content is protected !!