রাজধানী ঢাকা ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এ নিয়ে রেড এলার্ট জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিনারায় রয়েছে চট্টগ্রামও। গত এক মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত এপ্রিল মাসে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮ জন। আর ক’দিন বাকি থাকতেই চলতি মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে। মাসের বাকি কয়েকদিনে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
হিসেবে চলতি মে মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের এ সংখ্যা গত মাসের (এপ্রিল) তুলনায় প্রায় তিনগুণ। তবে মার্চ মাসের আক্রান্তের তুলনায় চলতি মাসের আক্রান্তের সংখ্যা চারগুণ বেশি। মার্চ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১২ জন রোগী শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া জানান, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২৮ মে পর্যন্ত মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় মোট ১৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চ মাসে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন এবং চলতি মাসে (২৮ মে পর্যন্ত) ৪৫ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে চলতি মৌসুমে। বর্তমানে ৮ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছর প্রথম ৫ মাসে শনাক্ত রোগীর এ সংখ্যা গতবছরের একই সময়ের তুলনায় দশগুণের বেশি। গতবছর (২০২২ সালে) প্রথম ৫ মাসে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭ জন। আর চলতি বছর প্রথম ৫ মাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৭৪ জন। গতবছরের জানুয়ারিতে ৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪ জন, মার্চে ১ জন, এপ্রিলে ৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। আর মে মাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল শূন্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি শুরু হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। কিন্তু এবার পুরোদমে বর্ষা না নামতেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য বিভাগও। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে বলে মনে করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
তিনি বলেন, কিছুদিন বেশ গরম পড়লেও ঘুর্ণিঝড়ের পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। আর থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন পাত্রে (জায়গায়) পানি জমে মশার লার্ভার সৃষ্টি হচ্ছে। যেখানে এডিশ মশার প্রজনন (বংশ বিস্তার) ঘটছে। মূলত এ কারণেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে মশার লার্ভা ধ্বংস করা, এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা। মোটকথা মশক নিধন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা। আর মশা নিধনের এ কাজ স্বাস্থ্য বিভাগের নয়। সিটিকর্পোরেশন বিষয়টি দেখবে। স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
অভিন্ন মত পোষণ করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধন কার্যক্রমে জোর দিতে বলেছেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মশা নিধন কার্যক্রমে সিটি কর্পোরেশনকে এখনই ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো ঢাকা ও কঙাবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মতো পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
এদিকে, চলতি মে মাসে সবমিলিয়ে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। তবে গত সোমবার একজন রোগীও হাসপাতালে ভর্তি ছিল না। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও ডেঙ্গুর চিকিৎসায় সার্বিক ভাবে প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।
তিনি বলেন, আক্রান্ত রোগীদের মেডিসিনের তিনটি ওয়ার্ডে এবং শিশুদের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হয়। রোগী বাড়লে মেডিসিনের তিনটি ওয়ার্ডে আলাদা ডেঙ্গু কর্ণার স্থাপন করা হবে। আমাদের চিকিৎসক–নার্সরা আগে থেকেই ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। রোগী বাড়লেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানালেন জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।