
ঢাকা শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে দুবাই ফেরত প্রতারক ব্যবসায়ী এনএন ফিশ প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনকে (৩৯) ধরে চট্টগ্রামে আনা হলো বিমানে। নগরীর সদরঘাট স্ট্যান্ড রোডের মাছ ব্যবসায়ীদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মেরে দুবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী।
শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে দুবাই থেকে বিএস-৩৪৪ ফ্লাইটে ঢাকা শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামতেই ইমিগ্রেশন শাখার পুলিশ তাকে চিনে ফেলে। পরে তাকে আটক করে খবর দেয় চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানায়। দুপুরে পুলিশের দুই উপপরিদর্শক (এসআই) বিমানে করেই দ্রুত চলে যান ঢাকায়।
বিমানবন্দর থেকে রাত পৌনে আটটায় এয়ার অ্যাস্ট্রার ফ্লাইটে প্রতারক মাছ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনকে নিয়ে দুই এসআই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান পৌনে নয়টায়। সেখান থেকে তাকে সরাসরি নেয়া হয় সদরঘাট থানায়।
শনিবার (২২ জুন) দুপুরে এ তথ্য জানান সদরঘাট থানার ওসি ফেরদৌস জাহান। তিনি বলেন, প্রতারণার শিকার মাছ ব্যবসায়ী হাবিবের দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি ইসমাইলকে ঢাকা শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আমরা অফিসার পাঠিয়ে তাকে নিয়ে এসেছি। তাকে সিএমএম আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ওসি বলেন, ইসমাইল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা সৈন্যেরটেক এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে। তিনি মাছ ব্যবসায়ী হাবিবসহ কয়েকজনের ৫ কোটি টাকা মেরে দুবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের দুবাই নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি দেশে এসেছিলেন। এ মামলায় আগে আরও দু‘জনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।
পুলিশ জানায়, মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাবিব গত ২ ফেব্রুয়ারি তিন কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ তুলে তিনজনের বিরুদ্ধে সদরঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে দেখা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মাছ কেনেন ইসমাইল। এরপর তিনি গা ঢাকা দেন।
পরে ব্যবসায়ীরা ইসমাইলের কর্মচারী আল আমিন প্রকাশ নোমান (৩৯) ও ম্যানেজার কাউছার আহাম্মদ সাগরের (৩৫) কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে তারাও টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ওই মাসেই ইসমাইলকে প্রধান আসামি করে সদরঘাট থানায় একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় গত ৯ মে ভোরে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকা থেকে এজাহারভুক্ত আসামি নোমান ও সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত হন ইসমাইল বিপুল পরিমাণ টাকা আত্নসাৎ করে দুবাই চলে গেছেন। শুক্রবার (২১ জুন) সকালে দুবাই থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর বিমানে ঢাকা গিয়ে সদরঘাট থানার পুলিশের দুই এসআই তাকে রাতে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে।
কর্ণফুলী মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আবু ইউছুপ জানান, সদরঘাট এলাকায় এনএন ফিশ প্রতিষ্ঠানের মালিক ইসমাইল মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাছ কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতেন। নোমান ও সাগর নামের দুই ব্যক্তি কমিশনে তার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। বিশ্বাসের ওপর তাদের কাছে মাছ বিক্রি করা হয়। কিন্তু বিশ্বাস ভেঙে ব্যবসায়ীদের ৫ কোটি টাকা আত্নসাৎ করে ইসমাইল বিদেশে পালিয়ে ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদরঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্ণব বড়ুয়া বলেন, ইসমাইল প্রথমে এক হাতে ব্যবসা পরিচালনা করলেও পরে সেটা তার শ্যালক নয়ন ও ভাগ্নে সাগরকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেন। মাছ ব্যবসায়ীরা তাদেরকেই চিনতেন বেশি। ইসমাইল শুধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু সে পাঁচ কোটি টাকার মাছ বাকিতে কিনে দুবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ইমিগ্রেশনে আবেদন করেছিলাম।