কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর স্টেশনে দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। দুর্ঘটনার ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও ২০ দিন পর সেটি দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
এরপরই অভিযোগ উঠেছে, দায়সারা বা নয়ছয় করে প্রতিবেদন দাখিলের কারণে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত ও পর্যবেক্ষণ এতে উঠে আসেনি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন সুপারিশের পাশাপাশি কমিটির সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ভিন্নমতও দিয়েছেন প্রতিবেদনে। ফলে ঘটনার অধিকতর তদন্তে কমিটি গঠন হচ্ছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে রেল অঙ্গনে।
দুর্ঘটনার প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের (ডিআরএম) কাছে জমা দিলেও সদস্যদের মধ্যে ভিন্নমত থাকায় অধিকতর তদন্ত কমিটিও গঠন হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে বিষয়টি বিস্তারিত জেনে প্রয়োজন হলে উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করে সঠিক তথ্য-উপাত্ত এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক মুহাম্মদ ইমরান বলেন, গত বুধবার বিকেলে রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এতে দুর্ঘটনার জন্য কারা দায়ী, কারণ, পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ উল্লেখ আছে। তবে কমিটির সদস্যদের মধ্যে দ্বিমতের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য যাত্রীবাহী ট্রেনের লোকো মাস্টার (এলএম), সহকারী লোকো মাস্টার (এএলএম) ও পরিচালককে (গার্ড) দায়ী করা হয়েছে। অভিযুক্তরা সংকেত অমান্য করে ট্রেন চালিয়ে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও জানা গেছে, দুর্ঘটনার পরপরই রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক মুহাম্মদ ইমরানকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলওয়ে। কমিটিতে অপর সদস্যরা হলেন বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) জাহিদ হাসান, বিভাগীয় সংকেত প্রকৌশলী জাহেদ আরেফিন পাটোয়ারী তন্ময় ও বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এম এ হাসান মুকুল।
দায়িত্বে গাফিলতির কারণে ঘটনার পরদিন এলএম মো. জসিম উদ্দিন, এএলএম মো. মহসীন, গার্ড আবদুল কাদের ও সিগন্যাল মেইনটেইনার আবদুল ওয়াহেদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। অথচ তদন্তে দুর্ঘটনার জন্য সিগন্যাল মেইনটেইনার আবদুল ওয়াহেদের দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাটি নিয়ে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের সিচুয়েশন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসানপুর স্টেশনের প্যানেল বোর্ড দুর্ঘটনার দিন (রোববার) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এর দুই মিনিট আগে চট্টগ্রাম থেকে একটি পণ্যবাহী (কনটেইনার ট্রেন) ট্রেন ওই স্টেশনের লুপ লাইনে প্রবেশ করে। প্যানেল বোর্ড অকার্যকর থাকায় সিগন্যাল ব্ল্যাক (কালো) দেখানো হয়। এই সংকতের অর্থ যাই হোক না কেন ট্রেন থেমে যেতে হবে। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস সংকেত অমান্য করে লুপ লাইনে সংযোগ থাকা পণ্যবাহী ট্রেনকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পণ্যবাহী ট্রেনকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন। দুর্ঘটনায় সোনার বাংলা ট্রেনের সাতটি বগি ও ইঞ্জিন এবং মালবাহী ট্রেনের দুটি কনটেইনার ও গার্ড বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেগুলো দুমড়েমুচড়ে পাশের জমিতে গিয়ে পড়ে। রেললাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাত্রীবাহী ট্রেনের অন্তত ৫০ যাত্রী আহত হন। এর পরই ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।