মঙ্গলবার- ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

দুদকের মামলায় পদ্মা অয়েলের সিবিএ নেতা নাছির কারাগারে

দুদকের মামলায় পদ্মা অয়েলের সিবিএ নেতা নাছির কারাগারে
print news

“অস্থায়ী ভিত্তিতে ‘পিয়নের’ চাকরিতে প্রবেশ করা নাছির উদ্দিন এখন পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক। পিয়ন থেকে ধাপে ধাপে পদোন্নতি নিয়ে বর্তমানে নিয়োজিত আছেন কোম্পানিটির ক্ল্যারিক্যাল সুপারভাইজ হিসেবে। কর্মচারীদের নেতা হওয়ার সুবাদে সহজে পদোন্নতির সঙ্গে ঘুরতে থাকে সম্পদের ‘চাকাও’। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বনে যান কোটিপতি। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ আয়ের চেয়েও দ্বিগুণের বেশি”

দুই কোটি ১১ লাখ ৭১ হাজার ১৩০ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের সিবিএর সাবেক এক নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম আদালত।

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে আত্মসমর্পণপূর্বক জা‌মিনের আবেদন করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই কর্মকর্তার নাম নাছির উদ্দিন। তিনি পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের (সিবিএ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের পি‌পি আবদুর র‌শিদ বলেন, তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ১১ লাখ ৭১ হাজার ১৩০ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করেছিল দুদক। আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

এর আগে গতবছর ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ তার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। কার্যালয়টির উপ-সহকারী পরিচালক মো. সবুজ হোসেন বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় এবং ২ কোটি ৫৬ লাখ ২৮ হাজার ৮৬ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ১১ লাখ ৭১ হাজার ১৩০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়।

দুদক জানায়, নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৯ সালে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয় দুদক। পরবর্তীতে একই বছরের ১২ মে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দুদকের কাছে তিনি ২৭ লাখ ২৬ হাজার ৯০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদান করেন। এরমধ্যে আনোয়ারার চাতরীতে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৫০ টাকায় ৫২ শতক কৃষি জমি ও আলোচ্য জমিতে ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫০ টাকা ব্যয়ে একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করার কথা উল্লেখ করেন।

অথচ দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রকৌশলী দ্বারা পরিমাপে কমিউনিটি সেন্টারটি নির্মাণ ব্যয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৪৪ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ১৭ লাখ ২৮ হাজার ৩৮৪ টাকা গোপন করেন। এছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের রেকর্ডপত্র যাচাইককালে তার নিজ নামে ২৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকার সম্পদ ক্রয়ের তথ্য পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে তিনি ১ কোটি ৪৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩৮৪ টাকা স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

এর বাইরে তিনি তাঁর দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১ কোটি ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৭৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু যাচাইকালে তার নামে মোট ১ কোটি ৭০ লাখ ৬৯ হাজার ২২০ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এরমধ্যে তিনি লাইফ ইন্সুরেন্স, পলিসি স্কীম, মেসার্স আমিন নামে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ও জমা রাখেন। এখানে তিনি ৬৭ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৬ টাকা অস্থাবর সম্পদ গোপন করেন। সবমিলিয়ে তিনি ২ কোটি ১১ লাখ ৭১ হাজার ১৩০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন।

অন্যদিকে দুদকের অনুসন্ধানে নাছির উদ্দিন নিজ নামে ১ কোটি ৭৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৪ টাকার স্থাবর ও ১ কোটি ৭০ লাখ ৬৯ হাজার ২২০ টাকার অস্থাবর এবং পারিবারিক ব্যয়সহ সর্বমোট ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এরমধ্যে ১১ লাখ ৬৩ হাজার ২৯৮ টাকার ঋণ পাওয়া যায়। যা বাদ দিলে তার সম্পদের পরিমান দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭৫ টাকা। কিন্তু তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় মাত্র ১ কোটি ২০ লাখ ২৭ হাজার ৫৮৯ টাকা। অর্থাৎ তিনি ২ কোটি ৫৬ লাখ ২৮ হাজার ৮৬ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। যার কোন বৈধ তথ্য উপাত্ত দিতে পারেননি সিবিএ নেতা নাছির উদ্দিন।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে গুদাম থেকে রেলের মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও!

পদ্মা অয়েল কোম্পানীর সংশ্লিষ্টরা জানান, নাছির উদ্দিন আনোয়ারা উপজেলার চাতরী গ্রামের মৃত শেখ মোহাম্মদের ছেলে। তিনি নগরীর শিশু একাডেমি সংলগ্ন ইক্যুইটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। অস্থায়ী ভিত্তিতে ‘পিয়নের’ চাকরিতে প্রবেশ করা নাছির উদ্দিন এখন পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক। পিয়ন থেকে ধাপে ধাপে পদোন্নতি নিয়ে বর্তমানে নিয়োজিত আছেন কোম্পানিটির ক্ল্যারিক্যাল সুপারভাইজ হিসেবে। কর্মচারীদের নেতা হওয়ার সুবাদে সহজে পদোন্নতির সঙ্গে ঘুরতে থাকে সম্পদের ‘চাকাও’। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বনে যান কোটিপতি। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ আয়ের চেয়েও দ্বিগুণের বেশি।

ঈশান/খম/মউ

আরও পড়ুন

No more posts to show