বৃহস্পতিবার- ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

দুদক কর্মকর্তার মৃত্যুর মামলা তদন্তে পিবিআই এসপি নাঈমা

print news

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা পুলিশের হেফাজতে দুদকের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক সৈয়দ মো. শহীদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলা তদন্তের আদেশ পেয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়।

আদালতের আদেশে মামলাটি রেকর্ডের পর পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য বলা হয়েছে। সে হিসেবে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাচ্ছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর এসপি নাঈমা সুলতানা।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) এ তথ্য নিশ্চিত করে নাঈমা সুলতানা বলেন, মামলার আদেশ পিবিআই কার্যালয়ে পৌঁছেছে। আইনানুযায়ী চান্দগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করা হবে। এরপর নিয়মানুযায়ী আমিই মামলাটির তদন্ত করব।

এর আগে গত সোমবার পুলিশ হেফাজতে দুদকের সাবেক কর্মকর্তা সৈয়দ মো. শহীদুল্লাহকে হত্যার অভিযোগ এনে চান্দগাঁও থানার ওসি মো. খাইরুল ইসলাম, ওই থানার পরিদর্শক তদন্ত মনিবর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসুফ, এএসআই সোহেল রানাসহ মোট নয়জনের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহর স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার মামলাটি দায়ের করেন।

পরে মামলাটি রেকর্ডের জন্য চান্দগাঁও থানার ওসি খাইরুল ইসলামকে নির্দেশ দেন আদালত। তবে মামলাটি থানায় রেকর্ডের আগেই সোমবার (১৬ অক্টোবর) হঠাৎ স্ত্রীর অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়ে চলে যান চান্দগাঁও থানার ওসি খাইরুল ইসলাম।

এছাড়া একই দিন মামলার আরেক আসামি ও চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক তদন্ত মনিবর রহমানকেও নগর উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) পশ্চিম জোনের কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি ডিসি পশ্চিম কার্যালয়ের মো. ছাবেদ আলীকে চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনিই চান্দগাঁও থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে মামলায় অভিযুক্ত এএসআই ইউসুফ আলী ও সোহেল রানাকে ঘটনার পরই চান্দগাঁও থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান বলেন, ওসি খাইরুলের স্ত্রী অসুস্থ। সেজন্য তিনি ছুটি নিয়েছেন। পরিদর্শককে স্বাভাবিক নিয়মে বদলি করা হয়েছে।

দুদক কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় মামলার পর এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপকমিশনার বলেন, ছুটি স্বাভাবিক নিয়মে হয়েছে। বদলিও স্বাভাবিক নিয়মে হয়েছে। আমরা মামলার আদেশ মঙ্গলবার পেয়েছি। আর ছুটি ও বদলির অর্ডার হয়েছে গতকাল।

জানা গেছে, শহীদুল্লাহ দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক (ডিডি) ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি অবসর নেন। তিনি নগরের চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায় থাকতেন। সেখানে জমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত গত ২৯ আগস্ট দুদকের সাবেক কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও তার শ্যালক মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারী। মামলার অভিযোগ শুনে বিচারক ওইদিনই কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়া অপরাধ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

ওই সমন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন অর রশীদ গায়েব করে ফেলেন। ফলে আসামিরা আদালতে হাজির হওয়ার কোনো সমন পাননি। এরপর মামলার পরবর্তী তারিখ দেন আদালত। ওই তারিখে মামলার বাদী হাজির না হওয়ায় তার আইনজীবী সময়ের আবেদন করেন।

কিন্তু ওইদিনই আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে দেন। এরপর গত ৩ অক্টোবর রাতে শহীদুল্লাহকে আদালতের ওয়ারেন্ট দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পর শহীদুল্লাহ পুলিশ হেফাজতে মারা যান।

মামলার বাকি আসামিরা হলেন চান্দগাঁও থানা এলাকার বাসিন্দা এসএম আসাদুজ্জামান (৫২), মো. জসীম উদ্দীম (৩৭), মো. লিটন (৪৮), রনি আক্তার তানিয়া (২৬) ও কলি আক্তার (১৯)।

এদিকে যে মামলায় দুদকের শহীদুল্লাহ গ্রেপ্তার হয়ে মারা গেছেন, গত সোমবার আদালতে সেই মামলাটি বাদী রনি আক্তার তানিয়া নিজে হাজির হয়ে প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।

মৃতের পরিবারের অভিযোগ, জায়গা-জমি দখলের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জসিম উদ্দিন নামে তাদের এক প্রতিবেশী গত ২৯ আগস্ট রণি আক্তার তানিয়া নামে এক নারীকে দিয়ে শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করান। পুলিশ এ ষড়যন্ত্রে তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তা দেয়। যে আদালতে মামলা হয়েছিল, ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন উর রশীদ সমন আটকে রেখে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করান। সেই পরোয়ানামূলে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে শহীদুল্লাহ মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ তদন্তে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের উপকমিশনারকে প্রধান করে কমিটিতে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) ও বিশেষ শাখার সহকারী কমিশনারকে সদস্য করা হয়েছে।

জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) নিহাদ আদনান তাহিয়ান বলেন, আমাদের প্রথমে তিন কার্যদিবস সময় দেয়া হয়েছিল। আমরা আরও ১০ কার্যদিবস সময় নিয়েছি। আমাদের হাতে আরও পাঁচ দিন সময় আছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।

এদিকে বেঞ্চ সহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে এক সদস্যের কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম। এ অভিযোগে সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম-৬ আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন উর রশিদকে বিচার সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে সরিয়ে ক্যাশিয়ার পদে বদলি করা হয়।

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়