মঙ্গলবার- ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ধীরগতির ইন্টারনেটে কবরে আইসিটি খাত !

বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের

ধীরগতির ইন্টারনেটে সর্বনাশ আইসিটি খাত!
print news

ইটি ইন্ডাস্ট্রি, আইটিইএস, এফ-কমার্স এবং ফ্রিল্যান্সারদের এখন রাস্তায় নামার দশা। কারণ অর্ডার ক্যান্সেল হওয়ার পাশাপাশি একাউন্ট ডাউন খাওয়ায় বড় সর্বনাশ হচ্ছে তাদের । পুরো সপ্তাহ ব্লাকআউটের পর এখন যে ভয়াবহ ধীরগতিতে নেট চলছে তাতে এখনও যারা লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বেঁচে আছে তাদেরকেও কবরের দিকে হাঁটা দেওয়া লাগবে।

এ খাতের উদ্যোক্তাদের ভাষ্য,  প্রবাসীদের কাছে হাতজোড় করে রেমিটেন্স ভিক্ষা করার থেকেও বেশি জরুরি এখন নেট কানেক্টিভিটির একটা চূড়ান্ত ফয়সালা করা। তা নাহলে আইটি, আইটিইএস, অনলাইন মার্কেটিং, বিপিও, ই টিকেটিংসহ আরো যে কয়টা রিলেটেড ইন্ডাস্ট্রি আছে সেসবেরও হোমাসা হয়ে যাচ্ছে।

এতে করে কালেক্টিভলি কত বিলিয়ন ডলারের রাস্ট্রীয় ক্ষতি হয়েছে, হচ্ছে, হতে যাচ্ছে এবং তা রিকোভার করতে আগামী এক যুগের সম্মিলিত পরিশ্রমও কাজে দেবে বলে মনে হয় না। একটা ক্লাইন্টের CPA, CLTV ক্যালকুলেশান বাদই দিলাম।

বেসিস ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের কারও মাথায় কী ঢুকতেছে না যে, এই রকম বিশ্রি ইন্টারনেট ব্লাকআউট পলিসির কারণে যে আস্থাহীনতার জন্ম নেবে তাতে আইটি কোম্পানী, ওয়েব ডেভেলপার, ডাটা সায়েন্টিস্ট এবং ফ্রিল্যান্সারদের চাকরী চলে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন ক্লাইন্ট পেতেও কত ধরনের চ্যালেঞ্জ ফেইস করতে হবে? সরকার, নীতিনির্ধারক, রাস্ট্রকে প্রায়োরিটি বুঝতে হবে।

তাদের মতে, মার্কেটপ্লেস প্রোফাইল কিংবা তাদের এতোদিনে অর্জিত সম্মান ও সক্ষমতার স্ট্যান্ডার্ড পুরোপুরি হুমকির মুখে পড়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ করার জন্য নানা যুক্তি থাকতে পারে। কিন্ত ক্লায়েন্টরা যারা আইটি সেক্টর, ই-মার্কেট, ফ্রিল্যান্সারদেরকে নানা টেন্ডার ড্রপ করে তারা নিজস্ব ডেলিভারি ডেডলাইন মেনেই চলবে।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

তাদের কেউ কেউ না হয় দয়াপরবশ হয়ে বাংলাদেশের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ওয়ার্কারদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল হলেন। কিন্তু সেটা কতদিন তাঁরা সহ্য করবেন? সংগত কারণেই এক বা একাধিক বিকল্প কি তারা খুজে নেবেনা?

সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলছেন, আপনাদের ঢং আনলিমিটেড চলুক, দয়া করে আল্লাহর দোহাই লাগে ইমার্জিং ব্লাডলাইন কাইটা ফেইলেন না। এইটা একটা নবাগত শিশু। একটা শিশুকে হত্যা করা মানে একটা পুরো প্রজন্ম ধ্বংস কইরা দেয়া।

একজন উদ্যোক্তার ভাষ্য : 
আমার মেইন ক্যারিয়ার অনলাইনে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এমন ক্ষতির সম্মুখীন আমি করোনার সময়েও হইনি। অভ্যন্তরীণ গাফিলতির দ্বারা অপ্রয়োজনীয় সমস্যার জন্যে এতদিনের সাজানো সব কিছু এভাবে নষ্ট হয়ে গেলো। অর্থনৈতিক বিষয়টা বাদ দিলাম, ওয়ার্ক সার্কেলটা বিশালভাবে নষ্ট হয়ে গেছে আরও কিছু কনফার্মড পেমেন্ট ক্যানসেল হয়ে গেছে। কাউকে কিছু বলার মতো অবস্থা নাই। কারণ এগুলি বলে যে কোনো লাভ নাই। এতগুলি কর্মচারী নিয়ে এখন কী করি। সুযোগ থাকলে দেশ ত্যাগ করতাম মেন্টাল পেইন কতদিন আর নেওয়া যাই, একের পর এক ইস্যু। কয়দিন আগে ট্যাক্স ইস্যু এখন আবার এই ইস্যু, কাল চাঁদাবাজি ইস্যু, আবার সামনে আরেক ইস্যু .. মুখ খোলাও বিপদজনক। নেট এর যে স্পিড এর জন্যে আরো বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এখন খাইতেও পারছিনা আবার উগলাইতেও পারছিনা।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

আমি দেশের কয়েকশো এসএমই, আইটি ও আইটিইএস কোম্পানি, ও অলমোস্ট নিজ পরিশ্রম উদ্যোগ ও ভয়াবহ সেক্রিফাইসের ভেতর দিয়ে গড়ে উঠা ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটির যুবকদের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে বেকারত্ব বাড়ার শঙ্কা কমানোর স্বার্থে এই কথাগুলো লিখছি। কেউ অন্তত বোঝার চেষ্টা করেন কতবড় অর্থনৈতিক সংকটের দিকে পড়তে যাচ্ছি আমরা। তাই ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট কে প্রায়োরিটি রেখে পলিটিকাল ইন্টারেস্ট সেট করুন। চেষ্টা করুন এক্ষুনি এই মুহূর্তে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির একটা এবসলিউট ও পারমানেন্ট সলিউশন বের করুন।

বেসিসের সভাপতির ভাষ্য :
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের লাইফলাইন হল ইন্টারনেট আর এই শিল্পের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে আমাদের মেধাবী তারুন্যের কর্মদক্ষতা। যে পরিমাণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি আমাদের হয়ে গেছে তার সুদুরপ্রসারি ধাক্কা সামাল দিতে আমরা কতটুকু পারবো, তা শুধুমাত্র সময়ই বলে দিবে।

জিরো ইন্টারনেট আর ধীরগতির ইন্টারনেট মিলিয়ে ১৩ দিনের ক্ষতি আমাদেরকে হয়ত ১৩ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। ১৩ দিনের ব্যবসায়ীক ক্ষতির পাশাপাশি ক্লায়েন্টের আস্থা হারিয়ে ফেলা, একটা বড়সংখ্যক তরুন ডেভেলপারদের চাকুরি হারানোর শংকা এবং নতুন প্রজন্মের এই শিল্পের প্রতি আগ্রহ হারানোর আশংকা আমাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী ক্ষতির বড় আশংকার মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়েছে।

লোকাল মার্কেট এবং রপ্তানি বাজার মিলিয়ে বেসিসের হিসেব অনুযায়ী ১৩ দিনের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা। আর আগামী এক বছরে আমাদের সম্ভাব্য ব্যাবসায়ীক ক্ষতির পরিমাণ দাড়াবে প্রায় ১৪,০০০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন :  চট্টগ্রামে আগুনে পুড়েছে ৯ বসতঘর, দু‘জনের প্রাণহানী

আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকালে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এক জরুরী সভায় এসব তথ্য তুলে ধরেন বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। তিনি বলেন, সভায় আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি কাটিয়ে আবারো নতুন করে শুরুর পরিকল্পনা হিসেবে আমরা বেসিস থেকে নিম্নোক্ত দাবী সমূহ উত্থাপন করেছি। দাবিসমুহ হলো :-

1. আর কখনো ইন্টারনেট বন্ধ হবে না – এই মর্মে সরকারি প্রতিশ্রুতি এবং ঘোষণা।
2. লোকাল নেটওয়ার্ক কে ঢেলে সাজাতে হবে NIX, Email Server, DNS ইম্পলিমেন্টেশনের মাধ্যমে।
3. তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সকল প্রতিষ্ঠান এবং ফ্রিল্যান্সারদের আগামী ১২ মাস সরকারি উদ্যোগে ফ্রি ইন্টারনেট প্রদান।
4. চাকুরী হারানোর শংকা এবং সম্ভাব্য ব্রেইন ড্রেইন ঠেকাতে উদ্যোগ গ্রহন। এই সময়ে যেসকল প্রতিষ্ঠান নতুন জব ক্রিয়েট করবে, তাদের নুন্যতম ৫/১০ জন কে প্রতিমাসে মিনিমাম ৫০,০০০ টাকা স্যালারি বাবদ অনুদান।
5. আইসিটি বিষয়ক সরকারি প্রকল্পে আরো বেশি বাজেট বরাদ্দ করা এবং কাজের ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠান কে প্রাধান্য দেয়া।
6. রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান গুলোকে আগামী এক বছর ২০% ক্যাশ ইনসেন্টিভ দেয়া।
7. নতুন প্রজন্মকে এই খাতে উৎসাহিত রাখার জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করে প্রচারণা মূলক কার্যক্রম গ্রহণ।

এর বাইরে নতুন কোন ধারণা বা দাবী ভাবনায় আসলে সেটাও শেয়ার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ রাখেন তিনি।   

ঈশান/খম/মউ

আরও পড়ুন

No more posts to show
error: Content is protected !!